নানা রূপে নানা নামে জগন্মাতা - নিগূঢ়ানন্দ, হিন্দু ধর্মীয় বই পিডিএফ
(পৃথিবীর বর্ণাত্মক মাতৃদেবীদের পরিচয়)
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'নানা রূপে নানা নামে জগন্মাতা'
লেখক- নিগূঢ়ানন্দ
বইয়ের ধরন- হিন্দু ধর্মীয় বই
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ২১৪
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ১৪এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত
আরম্ভ কথন-
ইতিহাস চর্চা করলে দেখা যায় যে, প্রাচীন কালে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই লোকে প্রকৃতির অন্তরালে একটি বিশেষ শক্তি কাজ করে এমন বিশ্বাস করত। সেই শক্তিই প্রাকৃতিক সব ঘটনাবলি নিয়ন্ত্রণ করে এমন বিশ্বাস ছিল। এই শক্তিকে কেউ চিন্তা করত দেবতা জ্ঞানে, কেউ দেবী জ্ঞানে। যে যার আরাধ্যা শক্তিকে নিজের নিজের মত করে রূপ দিয়ে পূজা করত। যারা রূপ দিতে পারত না তারা কোন একটা কিছুকে সামনে রেখে তারই মধ্যে শক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করে তাকে আরাধনা করে খুশি রাখার চেষ্টা করত। যেমন, পাথর খণ্ড। এ ধরনের পূজাকেই বলে aniconic, কেউবা পাহাড়পর্বত, নদনদী, সাগর, গাছ, মৎস্য, জন্তু-জানোয়ার, কীটপতঙ্গ এ-সবের মধ্যে যে শক্তি আছে, সেই সব রূপের মধ্যেই সেই শক্তির পুজো করত। এর ফলে সর্বপ্রানবাদী প্রাচীন বিশ্বাস আত্মপ্রকাশ করে। বিজ্ঞান যখন তার মধ্য বয়স ত্ৰিমাত্রার জগতে তখন এ ধরনের বিশ্বাস মানুষের কাছে হাস্যর প্রতীয়মান হয়েছিল। বিজ্ঞান আজ বহুমাত্রিক অবস্থা প্রাপ্ত হলে ত্রিমাত্রীয় বিজ্ঞানের বহু বিশ্বাস আজ ভেঙে পড়ছে। এর ফলে, এমন একটা সূক্ষ্ম জগতের অস্তিত্ব ধরা পড়ছে, যেখানে অফুরন্ত প্রাণ ও মানসশক্তি প্রবাহিত। অব-অণবিক জগৎ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে যে, সেখানে একটা অদ্ভুত পরিকল্পনাময় মানসক্রিয়া চলেছে। এই মানসক্রিয়া বিশ্বের সর্বত্রই প্রবহমান। সুতরাং প্রকৃতির অন্তরালে একটি মানস শক্তি যে বিরাজমান- প্রাচীনদের, বর্ব্বরদের ও অসভদের সেই চিন্তা আজ অবহেলায় দূরে ঠেলে ফেলে দেবার নয়। সেই মানস শক্তি, জড়ে অজড়ে, প্রাণে অপ্রাণে সর্বহই রয়েছে। যে যে কামনা করে, যা কামনা করে, সেই আকাঙ্ক্ষিত জিনিষের অন্তস্থ মানস শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তা পেয়ে যায়। ইদানিং বৃক্ষাদির মানস শক্তির সঙ্গে সপ্রেম সম্পর্ক স্থাপন করে দেখা গেছে যে, তারা তারাতারি বৃদ্ধি পায়। দ্রুত ফল দান করে। বড় বড় সাধকেরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করতে পারতেন প্রকৃতিশক্তির সঙ্গে মনের যোগাযোগ স্থাপন করে। অজটীল প্রাচীন মন হয়তো সহজেই সেই প্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে মনের যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছিল। মানসক্রিয়ার মাত্রকে যে যে স্তরে রাখতে পেরেছিল- প্রকৃতির সেই সেই স্তরের সঙ্গে তার যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছিল। তাদের চিন্তা-মাত্রার তারতম্য অনুযায়ী
প্রকৃতিশক্তি নানা রূপে, নানা নামে তাদের কাছে ধরা পড়েছিল। সেইসব চিন্তা তরঙ্গ নিয়েই পৃথিবীতে দেশান্তরে নানা দেবদেবী আত্মপ্রকাশ করেছেন।
ভারতীয়রা সমগ্র প্রকৃতিকেই মহিলাত্মিকা বলে মনে করেন। যে শক্তি দ্বারা এই প্রকৃতির সৃষ্টি সেই শক্তিকেই তাঁরা মনে করতেন মহিলা-শক্তি। মহিলা-শক্তি সেই শক্তি— যার লীলার এক সময় শেষ আছে। পুরুষ হলেন সেই অবস্থা যার কোনদিন কোন ভাবেই রূপান্তর ঘটেনা। তিনি পূর্ণ। ভারতীয়রা মহাশূন্যতাকেই সেই পুরুষরূপে কল্পনা করেছেন। এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড সেই অবর্ণনীয় পুরুষের অব্যক্ত ইচ্ছার বেগে সৃষ্ট। যেখানে রূপ আছে, সেখানেই সীমিত। রূপের উদ্ভব আছে, বিকাশ আছে, লয়ও আছে। কিন্তু সেই অরূপ, অসীম, অব্যয়ের অর্থাৎ পুরুষের কোন বিকার নেই, লয়ও নেই। কিন্তু রূপের কল্পনার মধ্যে, রূপের মধ্যে যেসব দেবদলী আছেন তাঁদের লয় আছে। দেব-দেবীরাও অমর নন। তাঁদের বিভিন্ন মাত্রার অনস্থান হেতু কেউ কেউ দীর্য, দীর্ঘতর বা দীর্ঘতম আয়ুর অধিকারী এই যা।
* প্রিয় পাঠকগণ, নিগূঢ়ানন্দের আরো বই সংগ্রহ করুন-
> মহাতীর্থ একান্ন পীঠের সন্ধানে
> একান্নপীঠের সাধক
> সর্পতান্ত্রিকের সন্ধানে
> মৃত্যু ও পরলোক
> দিব্য জগৎ ও দৈব-ভাষা
> দেবতা দর্শন
ভারতীয় তন্ত্র-দর্শনে শূন্যতার বুকে অব্যক্ত কারনে আলোড়নের ফলে জগৎ সৃষ্টি হয়েছিল। বিজ্ঞান আজ বলছে যে, Total energy of the universe is absolute zero, অর্থাও শুন্য থেকেই সবকিছুর আবির্ভাব হয়েছে- বিজ্ঞান আজ সে-রকম মনে করে। যে অব্যক্ত আলোড়নে অরূপ থেকে রূপের প্রকাশ ঘটিছিল তা হল শূন্যতার অভান্তরস্থ আবেগের বিস্ফোরণের ফলে জাত তরঙ্গের জন্য। এই তরঙ্গগুলিই হল শক্তির এক একটি ধাপ। বিস্ফোরণের শব্দ থেকেই এই তরঙ্গগুলির উদ্ভব হয়েছিল। সেই শব্দই ভারতীয় ওঁ শব্দ ব্রহ্মাণ। তন্ত্রমতে একান্নটি বর্ণতরঙ্গে জ্বগতের সৃষ্টি হয়েছিল। একান্নাতম তরঙ্গে অণু আত্মপ্রকাশ করে। অণু-পরমাণুর পারস্পরিক যোগে বস্তু জগতের সৃষ্টি হয়। এই একান্নটি তরঙ্গই সংস্কৃত একান্নটি বর্ণ। আদি বর্ণ উচচারণের বাইরে। আর পঞ্চাশটি উচ্চারিত ও প্রতীকী রূপময়। তরঙ্গবাহিত হয়ে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের এই উৎপত্তির কথাই একান্ন শাক্তপীঠরূপী রূপক গল্পের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এই বর্ণগুলির অপরিসীম ক্ষমতা। পারস্পরিক যোগাযোগে অসংখ্য ভাব তৈরি করতে পারে। সেই কারণেই ভাষা প্রাণশক্তিময় ও ক্রমবর্ধমান। এই একান্নটি বর্ণের প্রত্যেকটির অন্তরালে শক্তি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় অবস্থিত। সেই মাত্রগুলি বিভিন্ন নাম ও রূপ লাভ করেছে। তাই বর্ণের সাহায্যে কোন পুরুষদেবতা রূপ এসে থাকলে মূলত তিনিও প্রকৃতিভুক্ত ও পুরুষ-প্রকৃতি মাত্র। মাতৃরূপে এলে তিনি নারী-প্রকৃতি। মূলত এই শক্তি মহিলাত্মিকা শক্তি। সেই জন্য পৃথিবীর মাতৃসাধনা সম্পর্কে আলোচনাকালে বর্ণের ভিত্তিতেই সেই আলোচনা করার চিন্তা ক'রে আমি প্রথম গ্রন্থটি লিখেছি— যার নাম ‘মাতৃতত্ত্ব, একান্নপীঠ ও পৃথিবীর মাতৃসাধনা'। ঐ গ্রন্থে একান্নপীঠের উদ্ভব ও বর্ণের সঙ্গে তার সম্পর্ক ইত্যাদি দেখিয়ে স্বর বর্ণত্মিকা মাতৃদেবীদের একটি পরিচয় দিয়েছি। এই মাতৃদেবীরা পুরাতত্ত্ব, দর্শন ও বিজ্ঞানের সঙ্গে এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে, তাঁদের সম্পর্কে অফুরন্ত কৌতুহল সৃষ্টি হয়। সুতরাং স্বরবর্ণাত্মিকা মাতৃদেবীদের পরিচয় দেয়ার পর লেখকের কৌতুহল স্তব্ধ হয়ে থাকেনি। বর্ণের ভিত্তিতে মাতৃদেবতাদের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ধরবার অসম্ভব ইচ্ছা জাগে। সেই কারণেই দুঃসাহস করে ব্যঞ্জনবর্ণাত্তিকা মাতৃদেবীলের পরিচয় লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি জানা যায় ব'লে ও আনন্দ মেলে ব'লে।
এই মাতৃদেবীদের পরিচয় দিতে গিয়ে দেখেছি যে, বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন দেশে, তাদের চিন্তা-মাত্রার তারতম্য হেতু বিভিন্ন নামে ও রূপে তাদের কল্পনা করেছেন। সেই বিভিন্ন নাম ও রূপ রীতিমত কৌতুকাবহ। সেই জন্য বাঞ্ছনবর্ণাত্মিকা মাতৃদেবতাদের পরিচয় গ্রন্থে গ্রন্থটির নামকরণ করা হল— 'নানা রূপে নানা নামে জগন্মাতা'। অর্থাৎ সেই মাতৃশক্তি জগন্মাতা যার চোখে যে রূপে যে নামে ধরা পড়েছিল তার পরিচয়।
প্রকৃতপক্ষে একা কোন ব্যক্তির পক্ষেই একাজ অসম্ভব। পূর্ণাঙ্গ গ্রস্থ যে আমি রচনা করছি এ দাবি করছি না। বহ রূপ ও বহু নাম হয়তো বাকি থেকে যাচ্ছে। এ শুধু আরম্ভ, পরবর্তী কেউ এসে আরও বহুরূপ ও নামের অসংখ্য মাতৃদেবতা এতে যুক্ত করে কলেবর বৃদ্ধি করবেন। সেই অপূর্ণ রূপ, নাম, তত্ত্ব ও তথ্যের জন্য আমন্ত্রন রইল। সকলের চেষ্টায় বিশ্ব মায়ের পরিচয় সর্বাঙ্গীন হোক। - লেখক
এই বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত বই 'নানা রূপে নানা নামে জগন্মাতা - নিগূঢ়ানন্দ' -এর বাংলা পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন
No comments:
Post a Comment