দেবযান- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা গল্পের বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- দেবযান
লেখক- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ২২০
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ৮এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত
‘দেবযান’ বইটি বিভূতিভূষণের সমস্ত রচনার মধ্যে একেবারে দলছাড়া গোত্রছাড়া। এই-ই প্রথম একটা কাল্পনিক কৃত্রিম অবাস্তব পৃষ্ঠপট নিয়ে উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। কিন্তু তবু শেষ পর্যন্তও তার প্রিয় জগৎকে এ থেকে বাদ দিতে পারেন নি, তার নিজস্ব জীবনদর্শনকেও না। বহু তথাকথিত বিদগ্ধ লেখক আছেন যাঁরা বই পড়ে বই লেখেন, যাঁরা পৃথিবীকে দেখেছেন অপরের অভিজ্ঞতা ও চিন্তার মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণ এ দলের লেখক ছিলেন না কোন কালেই। কিন্তু ব্যতিক্রম দিয়েই নাকি নিয়ম প্রমাণিত হয়—দেবযানও তার সেই ব্যতিক্রম।
বিভূতিভূষণের প্রথম জীবনের জ্ঞান-পিপাসা ও কৌতূহল—সীমাবদ্ধ বলব না—প্রবলতর ছিল দুটি বিষয়ে, উদ্ভিদবিদ্যা ও জ্যোতিষতত্ত্ব। প্রকৃতির প্রতি তার যে অনুরাগ-শৌখিন নয় তাও, বন্যপ্রকৃতি—আশ-শ্যাওড়া, ঘেঁটুফুল, তিৎপন্না, বনসিম, কেঁয়োঝাকা প্রভৃতি অখ্যাত অনাদৃত বনফুলের প্রতি তার আকর্ষণ প্রেমের মতোই আবেগময়—এই অনুরাগই তাঁকে সমগ্র ভাবে উদ্ভিদতত্ত্বের দিকে আকৃষ্ট করেছিল। বিভূতিবাবু যত রকম উদ্ভিদের ল্যাটিন নাম জানতেন, তত এই বিদ্যার কোন অধ্যাপকেরও মুখস্থ থাকে কিনা সন্দেহ। জ্যোতিষতত্ত্ব সম্বন্ধে আগ্রহ ও কৌতুহলও অত্যন্ত প্রবল ছিল তার। অসীম অনন্ত বিশ্বের রহস্য তাকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করত। বহু রাত্রির বিনিদ্র প্রহর আমাদের কেটেছে তার সঙ্গে আলোচনায় সে সময় লক্ষ্য করেছি, জ্যেতিষ্কমণ্ডলীর-রহস্যের কথা বলতে বলতে তিনি তন্ময় হয়ে যেতেন, তখন যেন নিজেকেই নিজে বলতেন, বোঝাতেন, দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি সেখানে বাহুল্য হয়ে পড়ত।
এই অনন্ত বিশ্বের রহস্য উপলব্ধি করতে করতেই, সম্ভবত যতই এ রহস্যে প্রবেশ করেছেন ততই মুগ্ধ বিস্মিত-শেষ পর্যন্ত বিহবল হয়ে পড়েছেন, মনে হয়েছে এই ধারণাতীত বিপুল (?-কোন সংজ্ঞা দেওয়া যায় একে ?) বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা কে, যার ইচ্ছায় ও নির্দেশে সীমাহীন পরিধিহীন বিশাল নীহারিকা এই লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র, কোটি কোটি তারকাপুঞ্জের জন্ম দিচ্ছে অথচ যে সব নক্ষত্রের মধ্যেও অযুত অযুত যোজনের ব্যবধান ! মন আপনিই বার বার নত হয়েছে তার চরণে।।
এবং এই ঈশ্বর-বিশ্বাসই ক্ৰমে ঈশ্বরের প্রতি প্রেমে পর্যবসিত হয়েছিল।
এ প্রেম যত দৃঢ় হয়েছে, ততই পার্থিব সমস্ত কামনা বাসনা লোভ থেকে তাঁর মন সরে এসেছে। তার চেয়েও বড় কথা-অভিমান-শূণ্য হ'তে পেরেছেন। তাঁর কোন প্রধান রচনাকে কেউ নিন্দা করলে অনায়াসে হেসে ‘চ্যান করুক গে যাক্' বলে উড়িয়ে দিতে পেরেছেন। বোধকরি চোদ্দটি তালি দেওয়া কেডস জুতো পায়ে দিয়ে তাঁর জন্যে বিশেষ ব্যবস্থায়-প্রেরিত গাড়িতে উঠে সভাপতিত্ব করতে যেতে পেরেছেন; কয়েক হাজার টাকার নোট কীটদষ্ট হয়েছে, হাজার দুই-তিন টাকার চেক তারিখ পেরিয়ে বাতিল হয়ে গেছে, সে ঘটনাকে স্মিত হাস্যে পরমুহূর্তেই মন থেকে সরিয়ে দিতে পেরেছেন ; তার আমলে টাকার অনেক মূল্য ছিল তবু পঁয়তাল্লিশ টাকা বেতনের ইস্কুল মাস্টারের পকেটে সাতশ টাকার নোট সাত মাস পড়ে থেকেছে—সেটা তুলতে বা কাকেও বলতে মনে পড়ে নি।
জ্যোতিষতত্ত্ব ও উদ্ভিদতত্ত্বের মতো আরও একটি বিষয়ে তার কৌতূহল ছিল, সেটা হচ্ছে পরলোকতত্ত্ব। এ বিষয়ে বিস্তর পড়াশুনো করেছেন, যখনই যেখানে কোন বই বা প্রবন্ধের সন্ধান পেয়েছেন—তা সংগ্রহ করে পাঠ করেছেন, ফলে কৌতুহল নেশায় পরিণত হয়েছে। মানুষের মৃত্যুর পরও তার সেই বিশেষ আত্মার অস্তিত্ব থাকে, সে আত্মার সঙ্গে এই পৃথিবীর যোগাযোগ থাকে, এবং কেউ কেউ আবার জন্মান্তর গ্রহণ করে—এটা তিনি সম্ভবত বিশ্বাস করতেন। 'সম্ভবত’ বলছি এই জন্যে যে, এই জিনিসগুলো ঠিক কেউ নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করতে পারে কিনা সন্দেহ আছে। শুনেছি যে বিখ্যাত নাস্তিক হার্বাট স্পেন্সার, ঈশ্বর যে নেই সারা জীবন এই সত্যটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, সেই ব্যক্তিই মৃত্যুকালে ‘যদিই ঈশ্বর থাকেন তো' তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। বিভূতিবাবুও আমাদের কাছে যে পরিমাণ উৎসাহ সহকারে বিভিন্ন পুথিপত্র নজিরের সাহায্যে পরলোকের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন—তাতে মনে হয় তার নিজের মনে একটু সন্দেহের বীজ কোথাও থেকেই গিয়েছিল। যা মানুষ তর্কাতীতভাবে সত্য বলে জানে তা প্রমাণ করার জন্যে এত কাণ্ড করে না। আর, এ সন্দেহ তো স্বাভাবিকও।
সে যাই হোক, জ্যোতিষতত্ত্ব আলোচনা এবং পরলোকতত্ত্ব ও ঈশ্বরে বিশ্বাস এই তিনেরই ফলশ্রুতি- 'দেবযান’ গ্রন্থের সৃষ্টি। তাঁর ডায়েরী পড়লে জানা যায় যে দেবযানের পরিকল্পনা বহুদিন থেকেই বীজাকারে তার মাথায় ছিল হয়ত সেই ‘পথের পাঁচালী' রচনার আমল থেকেই, শুধু-বাোধকরি ভাল করে ভেবে-চিন্তে লিখবেন বলেই—দীর্ঘকাল ভাবনার মধ্যে এই কল্পনাটাকে জইয়ে রেখেছিলেন।.. গজেন্দ্রকুমার মিত্র
প্রিয় বাংলা বইয়ের পাঠকগণ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিন্ন ধরণের উপন্যাস 'দেবযান- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়' এর পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
ডিজিটাল বইয়ের নাম- দেবযান
লেখক- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ২২০
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ৮এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত
‘দেবযান’ বইটি বিভূতিভূষণের সমস্ত রচনার মধ্যে একেবারে দলছাড়া গোত্রছাড়া। এই-ই প্রথম একটা কাল্পনিক কৃত্রিম অবাস্তব পৃষ্ঠপট নিয়ে উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। কিন্তু তবু শেষ পর্যন্তও তার প্রিয় জগৎকে এ থেকে বাদ দিতে পারেন নি, তার নিজস্ব জীবনদর্শনকেও না। বহু তথাকথিত বিদগ্ধ লেখক আছেন যাঁরা বই পড়ে বই লেখেন, যাঁরা পৃথিবীকে দেখেছেন অপরের অভিজ্ঞতা ও চিন্তার মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণ এ দলের লেখক ছিলেন না কোন কালেই। কিন্তু ব্যতিক্রম দিয়েই নাকি নিয়ম প্রমাণিত হয়—দেবযানও তার সেই ব্যতিক্রম।
বিভূতিভূষণের প্রথম জীবনের জ্ঞান-পিপাসা ও কৌতূহল—সীমাবদ্ধ বলব না—প্রবলতর ছিল দুটি বিষয়ে, উদ্ভিদবিদ্যা ও জ্যোতিষতত্ত্ব। প্রকৃতির প্রতি তার যে অনুরাগ-শৌখিন নয় তাও, বন্যপ্রকৃতি—আশ-শ্যাওড়া, ঘেঁটুফুল, তিৎপন্না, বনসিম, কেঁয়োঝাকা প্রভৃতি অখ্যাত অনাদৃত বনফুলের প্রতি তার আকর্ষণ প্রেমের মতোই আবেগময়—এই অনুরাগই তাঁকে সমগ্র ভাবে উদ্ভিদতত্ত্বের দিকে আকৃষ্ট করেছিল। বিভূতিবাবু যত রকম উদ্ভিদের ল্যাটিন নাম জানতেন, তত এই বিদ্যার কোন অধ্যাপকেরও মুখস্থ থাকে কিনা সন্দেহ। জ্যোতিষতত্ত্ব সম্বন্ধে আগ্রহ ও কৌতুহলও অত্যন্ত প্রবল ছিল তার। অসীম অনন্ত বিশ্বের রহস্য তাকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করত। বহু রাত্রির বিনিদ্র প্রহর আমাদের কেটেছে তার সঙ্গে আলোচনায় সে সময় লক্ষ্য করেছি, জ্যেতিষ্কমণ্ডলীর-রহস্যের কথা বলতে বলতে তিনি তন্ময় হয়ে যেতেন, তখন যেন নিজেকেই নিজে বলতেন, বোঝাতেন, দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি সেখানে বাহুল্য হয়ে পড়ত।
এই অনন্ত বিশ্বের রহস্য উপলব্ধি করতে করতেই, সম্ভবত যতই এ রহস্যে প্রবেশ করেছেন ততই মুগ্ধ বিস্মিত-শেষ পর্যন্ত বিহবল হয়ে পড়েছেন, মনে হয়েছে এই ধারণাতীত বিপুল (?-কোন সংজ্ঞা দেওয়া যায় একে ?) বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা কে, যার ইচ্ছায় ও নির্দেশে সীমাহীন পরিধিহীন বিশাল নীহারিকা এই লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র, কোটি কোটি তারকাপুঞ্জের জন্ম দিচ্ছে অথচ যে সব নক্ষত্রের মধ্যেও অযুত অযুত যোজনের ব্যবধান ! মন আপনিই বার বার নত হয়েছে তার চরণে।।
এবং এই ঈশ্বর-বিশ্বাসই ক্ৰমে ঈশ্বরের প্রতি প্রেমে পর্যবসিত হয়েছিল।
এ প্রেম যত দৃঢ় হয়েছে, ততই পার্থিব সমস্ত কামনা বাসনা লোভ থেকে তাঁর মন সরে এসেছে। তার চেয়েও বড় কথা-অভিমান-শূণ্য হ'তে পেরেছেন। তাঁর কোন প্রধান রচনাকে কেউ নিন্দা করলে অনায়াসে হেসে ‘চ্যান করুক গে যাক্' বলে উড়িয়ে দিতে পেরেছেন। বোধকরি চোদ্দটি তালি দেওয়া কেডস জুতো পায়ে দিয়ে তাঁর জন্যে বিশেষ ব্যবস্থায়-প্রেরিত গাড়িতে উঠে সভাপতিত্ব করতে যেতে পেরেছেন; কয়েক হাজার টাকার নোট কীটদষ্ট হয়েছে, হাজার দুই-তিন টাকার চেক তারিখ পেরিয়ে বাতিল হয়ে গেছে, সে ঘটনাকে স্মিত হাস্যে পরমুহূর্তেই মন থেকে সরিয়ে দিতে পেরেছেন ; তার আমলে টাকার অনেক মূল্য ছিল তবু পঁয়তাল্লিশ টাকা বেতনের ইস্কুল মাস্টারের পকেটে সাতশ টাকার নোট সাত মাস পড়ে থেকেছে—সেটা তুলতে বা কাকেও বলতে মনে পড়ে নি।
জ্যোতিষতত্ত্ব ও উদ্ভিদতত্ত্বের মতো আরও একটি বিষয়ে তার কৌতূহল ছিল, সেটা হচ্ছে পরলোকতত্ত্ব। এ বিষয়ে বিস্তর পড়াশুনো করেছেন, যখনই যেখানে কোন বই বা প্রবন্ধের সন্ধান পেয়েছেন—তা সংগ্রহ করে পাঠ করেছেন, ফলে কৌতুহল নেশায় পরিণত হয়েছে। মানুষের মৃত্যুর পরও তার সেই বিশেষ আত্মার অস্তিত্ব থাকে, সে আত্মার সঙ্গে এই পৃথিবীর যোগাযোগ থাকে, এবং কেউ কেউ আবার জন্মান্তর গ্রহণ করে—এটা তিনি সম্ভবত বিশ্বাস করতেন। 'সম্ভবত’ বলছি এই জন্যে যে, এই জিনিসগুলো ঠিক কেউ নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করতে পারে কিনা সন্দেহ আছে। শুনেছি যে বিখ্যাত নাস্তিক হার্বাট স্পেন্সার, ঈশ্বর যে নেই সারা জীবন এই সত্যটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, সেই ব্যক্তিই মৃত্যুকালে ‘যদিই ঈশ্বর থাকেন তো' তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। বিভূতিবাবুও আমাদের কাছে যে পরিমাণ উৎসাহ সহকারে বিভিন্ন পুথিপত্র নজিরের সাহায্যে পরলোকের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন—তাতে মনে হয় তার নিজের মনে একটু সন্দেহের বীজ কোথাও থেকেই গিয়েছিল। যা মানুষ তর্কাতীতভাবে সত্য বলে জানে তা প্রমাণ করার জন্যে এত কাণ্ড করে না। আর, এ সন্দেহ তো স্বাভাবিকও।
সে যাই হোক, জ্যোতিষতত্ত্ব আলোচনা এবং পরলোকতত্ত্ব ও ঈশ্বরে বিশ্বাস এই তিনেরই ফলশ্রুতি- 'দেবযান’ গ্রন্থের সৃষ্টি। তাঁর ডায়েরী পড়লে জানা যায় যে দেবযানের পরিকল্পনা বহুদিন থেকেই বীজাকারে তার মাথায় ছিল হয়ত সেই ‘পথের পাঁচালী' রচনার আমল থেকেই, শুধু-বাোধকরি ভাল করে ভেবে-চিন্তে লিখবেন বলেই—দীর্ঘকাল ভাবনার মধ্যে এই কল্পনাটাকে জইয়ে রেখেছিলেন।.. গজেন্দ্রকুমার মিত্র
প্রিয় বাংলা বইয়ের পাঠকগণ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিন্ন ধরণের উপন্যাস 'দেবযান- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়' এর পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
No comments:
Post a Comment