চিরকালের সেরা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটদের রচনা সমগ্র পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- চিরকালের সেরালেখক- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা- তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের ধরন- ছোটদের সাহিত্য
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৪১৪
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ২৪ এমবি
প্রিন্ট ভালো, অবশ্যই জলছাপমুক্ত
আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভূতিভূষণ যখন সাহিত্যক্ষেত্রে এসেছেন তখন বাংলা শিশুসাহিত্যের শৈশব পেরিয়ে গিয়েছে, অবনীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, দক্ষিণারঞ্জন মজুমদার, সুনির্মল বসু অর্থাৎ শিশুসাহিত্যের দিকপাল লেখকরা সকলেই এসে গিয়েছেন এবং তাদের রচনার সঙ্গে বাঙালি শিশু ও কিশোরদের পরিচয় ঘটেছে। তবুও বিভূতিভূষণ কিশোরচিত্তে নিজের জন্য একটি স্থায়ী আসন করে নিলেন ‘চাদের পাহাড়' প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে।
অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি শিশুসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাদান। শিশুর মনে কৌতুহল বেশি, কল্পনাও। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কল্পনাকে বাস্তব মোড়কে পুরে দেখার বাসনা তীব্র হয় এবং সেটি আর এক ধরনের কল্পনা। পরির দেশ কিংবা দৈত্য-দানব-রাক্ষস-খোক্ষস শিশুদের যতটা মুগ্ধ করে কিশোর মনকে ততটা লুব্ধ করে না, তারা ভালোবাসে অজানা ভৌতিক-ভয়াল পরিবেশ এবং অচেনাদেশে গিয়ে ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন হবার গল্প শুনতে। 'চাঁদের পাহাড়’ ঠিক সেই প্রত্যাশাই পূর্ণ করে। এ উপন্যাসের নায়ক অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় যুবক। তার তরুণ তাজা মন পাটকলের বাবু হবার কথা ভাবতেই পারে না--রেসের ঘোড়া শেষকালে ছাকরাগাড়ি টানতে যাবে? কখনোই নয়। অতএব শুরু হয় আফ্রিকার চাঁদের পাহাড়ের গল্প। লীলা মজুমদার লিখেছেন, 'চাঁদের পাহাড়ের নামটিও মন গড়া নয়, সত্যিকার আফ্রিকার সত্যিকার পাহাড়ের স্থানীয় নামের অনুবাদ মাত্র।' অথচ উপন্যাসটির অনুবাদ কিন্তু বিদেশি ছায়ায় লেখা হয়নি। ছোটোদের জন্য নিছক অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি লেখার সময়েও বিভূতিভূষণের সত্যনিষ্ঠা অভূতপূর্ব। আফ্রিকা যাবার ইচ্ছা তার ছিল, বিচিত্র জগতের জন্য উপাদান সংগ্রহের সময় তার সে বাসনা তীব্র হয়।
আফ্রিকা ভ্রমণকারীদের রচনা অত্যন্ত খুঁটিয়ে পড়ে তিনি ‘চাদের পাহাড়’ রচনায় হাত দেন এমনকী ডিঙ্গোনেক বা বুনিপের কথাও সংগ্রহ করেছিলেন জুলুল্যান্ডের আরণ্য অঞ্চলের প্রচলিত প্রবাদ থেকে। এই আহরণ শুধু কিশোরমনের উপযোগী করে নয়, কিশোরমনের ঔৎসুক্য নিয়েও। তাঁর আফ্রিকা ভ্রমণের বাসনার কথা 'উর্মিমুখর' দিনলিপিতেও রয়েছে, বাইরে কোথাও ভ্রমণের পিপাসা আবার জেগে উঠেছে।...
বিভূতিভূষণ কোথাও তার কিশোর পাঠকদের ফাঁকি দিয়ে ভোলাবার চেষ্টা করেননি অথচ এই ছেলে ভোলানো ব্যাপারটি আমাদের শিশুসাহিত্যে অত্যন্ত বেশি। শিশুসাহিত্য রচনা করা খুবই কঠিন সে অর্থেও। শিশুর মন ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড়োদের লিখতে হয়। তা কি সত্যিই সম্ভব? যদি না সেই বয়স্ক ব্যক্তির অবচেতনায় লুকিয়ে থাকে একটি কিশোরমন। ঠিক এই কারণেই রবীন্দ্রনাথের চেয়েও শিশুপাঠ্য কবিতা লিখে যোগীন্দ্রনাথ সরকার কি সুকুমার রায় অনেক বেশি শিশুমনের কাছে আসতে পেরেছেন, অবনীন্দ্রনাথ কি উপেন্দ্রকিশোরের গদ্যরচনা সম্বন্ধেও সে কথা বলা চলে: বিভূতিভূষণের 'চঁদের পাহাড় 'ও তাই। কিন্তু একই সঙ্গে বিভূতিভূষণ অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা।...
ভয়ংকর মরুভূমি এবং গহন অরণ্য বাঙালি কিশোরদের কাছে এমন নিবিড়রূপে ধরা দেয়নি। বাংলায় অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির সূত্রপাত হয়েছিল সখা পত্রিকায় একশো বছরেরও আগে কিন্তু প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি বাংলা শিশুসাহিত্যে কমই আছে। হেমেন্দ্রকুমার রায় আমাদের সঙ্গে সে পরিচয় ঘটালেন। সেই ধারাকেই পুষ্ট করেছেন বিভূতিভূষণ। তবে গোয়েন্দা গল্প রচনায় অনেক বেশি কৃতিত্ব হেমেন্দ্র কুমারের, ভ্রমণসংক্রান্ত অ্যাডভেঞ্চারে বিভূতিভূষণের। একথা শুধু ‘চাদের পাহাড়' পড়েই বলছি না, “হীরামানিক জ্বলে' সম্বন্ধেও একই কথা বলা চলে। শংকর ও সুশীলের মতো দুঃসাহসিক অভিযান বাঙালি কিশোরদের চিরকালের আকাঙক্ষা, বিভূতিভূষণ তাদের শুনিয়েছেন সাফল্যের মন্ত্রগুপ্তি 'লক্ষ্মী যান না কাপুরুষের কাছে, অলসের কাছে -তাদের তিনি কৃপা করেন যারা বিপদকে, বিলাসকে, আরামপ্রিয়তাকে তুচ্ছ বোধ করে।' অথচ যাবতীয় গুপ্তধন নিয়ে ফিরে আসেনি তার উপন্যাসের নায়কেরা, তারা লোভী নয়, সাহসী, দু-হাত ভরে ধন নয়, নিয়ে আসে অনেকখানি অভিজ্ঞতা, খোঁজ পায় গভীর জীবন রহস্যের। ছেলেমেয়েদের জন্য বই লেখার অন্যতম শর্ত যে, শিক্ষা দেওয়া--বিভূতিভূষণের উপন্যাসে তার পরিচয় পাওয়া যায়।...
ছোটোদের উপন্যাস লেখার সময় বিভূতিভূষণ যেমন বেছে নিয়েছিলেন দুঃসাহুসিক অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি, গল্পে তেমনই প্রাধান্য পেয়েছে অবিশ্বাস্য, অলৌকিক কাহিনি। ভূতের গল্পের প্রতি তার নিজের যেমন 'টান ছিল তেমনই জানতেন শিশুমনে অলৌকিক কাহিনি প্রভাব বিস্তার করে বেশি। যদিও সত্যিই শিশুরা ভূতুড়ে গল্প ভালোবাসে কি না বলা শক্ত, তবে শিশুসাহিত্যিকেরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত দক্ষ। খুব বেশি ভয়াবহ না করে তার রহস্য কাহিনি এবং ভৌতিক কাহিনিকে শিশুদের উপযোগী করে পরিবেশনে দক্ষ। বিভূতিভূষণের গল্প সম্বন্ধেও একথা খাটে। তাঁর ‘রঙ্কিনীদেবীর খড়গ’ ও ‘গঙ্গাধরের বিপদ’ বেশ নতুন ধরনের অলৌকিক কাহিনি, গা ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি করে লেখক শেষ পর্যন্ত কিশোর পাঠকদের মুগ্ধ করে রাখেন। 'মেডেল' গল্পটি ভূতের, বন্ধক রাখা মেডেলটিতে ছাড়াতে না পারা ভূতটির মেডেলের সঙ্গে থেকে যাওয়া হয়তো নতুন নয় কিন্তু ভালো লাগে পড়তে। ...
বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ যেমন আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র স্থান অধিকার করেছিলেন, শিশুসাহিত্যেও তিনি তেমনই একটি ভিন্ন সুর এনেছিলেন। কাহিনি, ঘটনার উপস্থাপনা বা বিষয়বস্তু ছাড়াও আমরা তার অধিকাংশ রচনাতেই পাই অবিস্মরণীয় কয়েকটি অল্পবয়সি চরিত্র, এদের কেউই ঠিক কাল্পনিক চরিত্র নয়, লেখকের দিনলিপিতে তাদের হদিশ মেলে আর যাদের মেলে না তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে স্বয়ং বিভূতিভূষণের। সেজন্য কিছুটা অসঙ্গতি ও অন্যমনস্কতা বিভূতি-সাহিত্যে ছায়া ফেললেও কিশোর পাঠকদের মনে, গভীরে তিনি পৌছোতে পেরেছিলেন। সহজে বাঙালি কিশোর যতদিন অ্যাডভেঞ্চারের স্বপ্ন দেখবে ততদিন ‘চাঁদের পাহাড়’ও থাকবে, সাহিত্যিকের সততার পরিচয় এখানেই। - চিত্রা দেব
বইটি সম্পাদন করেছেন লেখকের সুযোগ্য পুত্র লেখক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
বইটির সূচিপত্র-
'আমার লেখা'
গল্পো-
'তালনবমী'
'ভন্ডুলমামার বাড়ি'
'সই'
'চাউল'
'পৈতৃক ভিটা'
'গঙ্গাধরের বিপদ'
'অবিশ্বাস্য'
'কাশী কবিরাজের গল্প'
'চ্যালারাম'
'বাঘের মন্তর'
'হারুন-অল-রসিদের বিপদ'
'গল্প নয়'
'ভৌতিক পালঙ্ক'
'ঝড়ের রাতে'
'বামা'
'রঙ্কিনীদেবীর খড়্গ'
উপন্যাস-
'অপুর কথা'
'চাঁদের পাহাড়'
'হিরা মানিক জ্বলে'
অরণ্য ও প্রকৃতি-
'বনে পাহাড়ে'
ভ্রমন-
'বিপুলা এ পৃথিবী'
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় ছোট্ট পাঠকরা, তোমরা সংগ্রহ করতে পার এই অসাধারণ ছোটদের রচনা সমগ্র- 'চিরকালের সেরা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়' এর পিডিএফ ফাইল।
No comments:
Post a Comment