নারদীয় ভক্তিসুত্র - স্বামী প্রভবানন্দ পিডিএফ - বাংলা বই এর pdf ডাউনলোড-Bangla Digital Boi Pdf

Latest

Thursday, November 10, 2022

নারদীয় ভক্তিসুত্র - স্বামী প্রভবানন্দ পিডিএফ


 নারদীয় ভক্তিসুত্র - স্বামী প্রভবানন্দ, ধর্মমুলক বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'নারদীয় ভক্তিসুত্র'
লেখক- স্বামী প্রভবানন্দ
বইয়ের ধরন- ধর্মমুলক বই
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ১৭২
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ৮এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত,

নারদীয় ভক্তিসুত্র - স্বামী প্রভবানন্দ

নারদ বলছেন, “ভক্তিপথই ভগবানলাভের সহজতম পথ।”
ভক্তিপথ বা ভক্তিযোগ হ’ল ভালবাসার মাধ্যমে ভগবালাভের পথ। ভগবানকে ভালবাসার জন্য এবং তাঁর ভালবাসা উপলব্ধি করার জন্য ভক্ত সজাগ হয়ে নিরন্তর চেষ্টা করে ; ভগবানের নামজপ এবং আনুষ্ঠানিক পূজাদি তার সাধনা। ঈশ্বরের কোন বিশেষ রূপকে বা অবতারগণের মধ্যে কোন একজনকে বিশেষ উপাস্যরূপে (ইষ্টরূপে ) বরণ করে সে তাতে মনোনিবেশ করে। অন্যান্য আচার্যগণের মতোই নারদ জোর দিয়ে বলছেন, ভক্তি যত বৃদ্ধি পাবে ভক্ত তত বেশী করে অনুভব করবে যে, তার উপাস্য তার অন্তরেই রয়েছেন, তিনিই তার স্বরূপ ; ভক্তির চরম অবস্থায় উপলব্ধ হবে, উপাসক ও উপাস্য অভেদ।
হিন্দুদর্শন মতে ভগবানের সঙ্গে নিজের এই একত্বানুভূতির পথ চারটি -ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, রাজযোগ ও জ্ঞানযোগ। কর্মযোগ হ’ল নিঃস্বার্থ কর্মেব—ফলাকাঙ্ক্ষাশূন্য হয়ে, দুঃখে অনুদ্বিগ্ন থেকে কৃত কর্মের পথ ; মানুষকে ঈশ্বরজ্ঞানে সেবা করা এ পথের সাধনরূপে প্রায়শঃ গৃহীত হয়। জ্ঞানযোগ হ’ল সদস-বিচারের মাধ্যমে ভগবালাভের পথ ; চূড়ান্ত বিশ্লেষণের ফলে যখন জাগতিক সব কিছু অসৎ, অনিত্য বলে পরিত্যক্ত হয়, তখন (সদ্বস্তু বলতে) থাকেন একমাত্র ভগবান্ ; এবং এই ‘নেতি নেতি’ করে বিচারের দ্বারাই তিনি উপলব্ধ হন। রাজযোগ হ’ল গভীর ধ্যানের মাধ্যমে ভগবালাভের পথ।
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এ তিনটি পথে চলতে গেলে যে-সব গুণ ও যে শক্তির প্রয়োজন, তা প্রত্যেকের, এমনকি অধিকাংশ লোকেরই নেই। কর্মের পথে বীরোচিত শক্তি এবং সেইসঙ্গে অত্যধিক নম্রতা ও ধৈর্যের প্রয়োজন; জ্ঞানপথে চলতে গেলে চাই অসাধারণ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ; রাজযোগে চাই অচঞ্চল একাগ্রতা ও ইন্দ্রিয়-সংযম। দেখা যায়, এ সবের তুলনায় ভক্তিযোগের সাধনা অনেক সহজ, কম কঠোর এবং অধিকতর আকর্ষণীয়। তাছাড়া, অসাধারণ শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও একাগ্রচিত্ততার অধিকারী বলে গর্ব করতে না পারলেও আমাদের সকলেরই দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, আমরা ভালবাসতে পারি। কাজেই যোগগুলির মধ্যে ভক্তিযোগই সহজতম-- একথা আমরা শোনামাত্রই মেনে নিই।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই মেনে নেওয়াটা একটু বেশী তাড়াতাড়িই হয়ে যায়। কারণ, আমরা বেশীরভাগ লোকই কি ঠিকমতো বুঝি, কি বরণ করছি ? ভগবৎ-প্রেম বলতে নারদ কি বোঝাতে চাচ্ছেন সে সম্বন্ধে আমাদের আদৌ কোন ধারণা আছে কি? আমরা যখন ভালবাসা বা প্রেম শব্দটি ব্যবহার বা অপব্যবহার করি তখন নিজেরাই কী বোঝাতে চাই তা কখনো তলিয়ে ভেবেছি কি ? বস্তুতঃ, আমরা কখন কি কাউকে ঠিক ঠিক ভালবেসেছি ?
“To be in love with love” (ভালবাসার প্রেমে পড়া )--এই বাক্যটি (ইংরেজী ভাষায়) এক সময় দৈনন্দিন কথাবার্তায় খুবই প্রচলিত ছিল, সঙ্গীত-রচয়িতাদের খুবই প্রিয় ছিল। প্রাপ্তবয়স্কেরা তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হৃদয়াবেগ সম্বন্ধে আলোচনাকালে একটু মুরুব্বির হাসি ফুটিয়ে বলতেন, “ও ভালবাসার প্রেমে পড়েছে—ও কিছু নয়।” অর্থাৎ আলোচ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি সত্যিই প্রেমে পড়েনি, আবেগময় আত্ম-প্রবঞ্চনাকে একটু প্রশ্রয় দিচ্ছে মাত্র। কোন অভিজ্ঞ যোদ্ধা যখন কোন শিক্ষানবীস সৈনিক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে তখন তার কথার সুরে যেমন একটা ভয়ানক তৃপ্তির ইঙ্গিত থাকে, ঠিক সেই ইঙ্গিতই প্রাপ্তবয়স্কদের কথার সুরে থাকতো : যথার্থ ভালবাসা কি বস্তু, তা ওরা পরে বুঝবে সে ভালবাসা হ’ল পরিণত, গাভীর্যময় এবং বাস্তবস্পৰ্শী।
পূর্বোক্ত বাক্যটি এখন আর প্রচলিত নয়, কিন্তু মনোভাবটি রয়ে গেছে ; ভালবাসা প্রকৃত কি না, তা এখনো নির্ধারিত হয় সে-ভালবাসা কী পরিণাম ও দায়িত্ব আনল তা দেখে—সামাজিক স্বীকৃতি না অপমান, বিবাহ না বিচ্ছেদ, সম্পদ না ঋণ, সন্তানপালন না নিঃসন্তান, গার্হস্থ্য জীবনের দাসত্ব না তা থেকে মুক্ত থাকা? লোকে ভালবাসার কথা আলোচনা করছে ব'লে যখন মনে হয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই আসলে তখন আলোচিত হয় ভালবাসার ফলাফলের কথা; সত্যি বলতে কি, কখনো কখনো এই ফলাফলগুলির জন্য ভালবাসাকে চিনে ওঠাই দায় হয়। সাধারণতঃ যা আলোচিত হয় তা অবশ্য অন্যসম্পর্ক। কিন্তু একথা তো কেউ অস্বীকার করতে পারে না যে, মা-বাপ ও সন্তানদের মধ্যে, বন্ধুদের মধ্যে, সহকর্মীদের মধ্যে, এমনকি পালিত পশু ও তার প্রভুর মধ্যেও যে (ভালবাসার)সম্পর্ক, তা-ও সঙ্কটকালে সমভাবে তিক্ত হয়ে উঠতে পারে, অনুরূপ সামাজিক ও আর্থিক অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে, ঈর্ষাজনিত এবং বিরুদ্ধ অহমিকার নির্দয় সংঘর্ষজনিত অনুরূপ যন্ত্রণার ঝড় তুলতে পারে?
এমন লোক নিশ্চয়ই অনেক আছেন যারা তাদের অহমিকার বাঁধনকে যে-ভাবেই হোক প্রয়োজনমতো একটু আলগা করে দিতে পারেন, যাতে মোটামুটি নিঃস্বার্থভাবে পরস্পরকে আজীবন ভালবাসতে পারা যায়। এমনকি, সর্বাধিক অসুখী সম্পর্কের মধ্যেও কিছুটা ভালবাসা বা যা-হোক একটু ভালবাসার স্মৃতি সবসময়ই থাকে। আর, নারদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, অহমিকার দ্বারা যত বিকৃত বা সীমিতই হোক না কেন, সব ভালবাসাই মূলতঃ ঈশ্বরীয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই ধরণের অসম্পূর্ণ মানবিক ভালবাসার ধারণা কি ভক্তিযোগ সম্বন্ধে ধারণা করতে আমাদের কোন সহায়তা করতে পারবে?
নারদবর্ণিত যে ভালবাসা, তাতে কোন ঈর্ষা, কোন অহমিকার দ্বন্দ্ব, কোন পার্থিব সুবিধালাভ বা একচেটে অধিকারলাভের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না; এ ভালবাসায় নিরানন্দের কোন স্থান নেই। এমনকি, ভগবানের সহিত সাময়িক বিচ্ছেদজনিত যন্ত্রণাকেও নিরানন্দ বলা যায় না; যে ভক্ত সে-বিচ্ছেদ অনুভব করে, একে বিচ্ছেদ ব’লে বোঝে বলেই সে উপলব্ধি করে যে, ভগবান আছেন এবং তাঁর সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রাণবন্ত ও বাস্তব।
কিন্তু ভক্তিশাস্ত্রের শিক্ষানবীস অবস্থায় আমরা এই দুঃখহীন প্রেমতত্ত্ব ধারণাই করতে পারি না, বলা চলে। আমরা মনে মনে ভাবি, একে ভালবাসাই বলা চলে না—এ ভালবাসা তো নিরুত্তাপ, অস্বাভাবিক ও অমানবিক। কারণ, অকপট হ'লে আমাদের স্বীকার করতেই হয়, জাগতিক ভালবাসার দৃষ্টিভঙ্গী আমাদের এত সর্তাবদ্ধ করে ফেলেছে যে ভালবাসতে হলে সত্যিসত্যিই আমাদের ঈর্ষাপরায়ণ হতে হবে, লালসা ও উদ্বেগের যন্ত্রণায় ভুগতে হবে, অসম্ভব একচেটে অধিকারের জন্য দাবী জানাতে হবে; কারণ এইসব পরিচিত যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তিকেই আমরা ভালবাসার সুখ বলি—এসব যন্ত্রণা না থাকলে তা উপভোগই করতে পারি না। কাজেই ‘ভালবাসার সঙ্গে প্রেমে পড়া’—এই আপাত-অর্থহীন পুরনো বাক্যটির এখনো কিছু প্রয়োজনীয়তা আছে ; ভক্তি বলতে কি বোঝায়, সে সম্বন্ধে প্রাথমিক আভাস দিতে বাক্যটি বোধ হয় সহায়ক হতে পারে। দুটি ব্যক্তিসত্তার পারস্পরিক সম্পর্করূপে ভালবাসার কথা চিন্তা করা বন্ধ রেখে, আসুন, আমাদের প্রত্যেকের ভেতর ভালবাসার শক্তি কতখানি আছে, সে বিষয়ে মননানিবেশ করা যাক। সে শক্তি হয়তো খুব কম হতে পারে, কিন্তু তা আমাদের নিজস্ব এবং তা কখনো ফুরিয়ে যাবে না। আমরা সবাই একমত হতে পারি যে, আমাদের ভালবাসা এভাবে যখন বাইরের কোন বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কহীনভাবে বিবেচিত হয়, তখন সেভালবাসাই ভালবাসার যোগ্য এবং সম্পূর্ণরূপে কামনা ও যন্ত্রণামুক্ত হয়ে ওঠে। প্রেমই ভগবান—এই ভাবটিকে এভাবে আমরা ধারণায় আনা শুরু করতে পারি।- ক্রিস্টোফার ঈশায়উড

ভক্তিসূত্রের প্রণেতা নারদ। কিন্তু নারদ কে ছিলেন, বলা বড় কঠিন। পৃথিবীর প্রাচীন শাস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম ছান্দোগ্য উপনিষদে নারদের নামের প্রথম উল্লেখ পাওযা যায়। সেখানে আমরা দেখি, তিনি অধ্যাত্মজ্ঞানপিপাসু হয়ে মহর্ষি সনৎকুমারের নিকট যাচ্ছেন। ঐ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, নারদ কলা, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, দর্শন এবং প্রাচীন শাস্ত্রদির সকল বিভাগেই পারদর্শী ছিলেন। তিনি সনৎকুমারকে বললেন, “আমি শান্তি পাচ্ছি না। আমি সব পড়েছি, কিন্তু আত্মাকে জানি না। আমি আপনার মতো মহান আচার্যদের কাছে শুনেছি, যে আত্মাকে জানে সেই কেবল দুঃখকে অতিক্রম করতে পারে। আমার কপালে চিরদুঃখ। এই দুঃখ থেকে নিম্নতি পাবার জন্য আমাকে দয়া করে সাহায্য করুন।”
এভাবে গুরু ও শিষ্যের মধ্যে অনেক আলোচনার পর সনৎকুমার নারদকে বললেন, “ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি।” ভূমাতেই সুখ ; অল্পেতে সুখ নেই। যা অসীম, তা অমরণধর্মী ; সসীম বস্তু মরণশীল। যিনি পরমাত্মাকে—সেই সীমাহীন সত্তাকে জানেন, তাকে ধ্যান করেন এবং উপলব্ধি করেন, তিনি আত্মাতেই রমণ করেন, আত্মাতেই মিলন-সুখ অনুভব করেন এবং আত্মানন্দে মশগুল হয়ে যান, তিনি তখন নিজের ও জগতের প্রভু হন। যারা এই সত্য জানে না, তারা ক্রীতদাস-স্বরূপ।
“ইন্দ্রিয়গণ পবিত্র হলে [অর্থাৎ আসক্তি ও তৃষ্ণা-বর্জিত হয়ে ইন্দ্রিয়সমূহ বিষয়ের ভিতর বিচরণ করলে] হৃদয় পবিত্র হয় ; হৃদয় পবিত্র হ'লে নিবন্তর অবিচ্ছিন্নভাবে পরমাত্মার স্মরণ-মনন হয় ; এবং এরূপ ধ্রুবা স্মৃতি লাভের ফলে সকল বন্ধন শিথিল হয়ে যায়, সাধক মুক্ত হয়।”
এরপর আমরা শ্ৰীমদভাগবতে নারদের উল্লেখ পাই। সেখানে তিনি একজন মুনিবর ব্ৰহ্মজ্ঞ মহাপুরুষ হয়েছেন। নারদ ব্যাসকে (যিনি বেদের সংকলক ও মহাভারতের রচয়িতা) শ্ৰীমদ্ভাগবত গীতা রচনা করবার জন্য অনুরোধ করেন।

এই বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা আধ্যাত্মিক বিষয়ক বই 'নারদীয় ভক্তিসুত্র - স্বামী প্রভবানন্দ' সংগ্রহ করিতে পারিবেন

No comments:

Post a Comment