বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার - আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় পিডিএফ - বাংলা বই এর pdf ডাউনলোড-Bangla Digital Boi Pdf

Latest

Tuesday, September 1, 2020

বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার - আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় পিডিএফ


বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার - আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
লেখক- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়
বইয়ের ধরন- প্রবন্ধ সংগ্রহ
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৪২
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ৫এমবি
সৌজন্যে- অরিজিৎ দাস
প্রিন্ট ভালো তবে মোবাইল স্ক্যান, জলছাপ মুক্ত

বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার - আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়
জন্মসার্ধশতবর্যের দৌলতে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (১৮৬১-১৯৪৪) বাঙালি তথা ভারতবাসীর কাছে বিজ্ঞানাচার্যের কৌলিন্য আদায় করে নিলেও তার সাহিত্যপ্রতিভার দিকটি আজও আমাদের কাছে অনেকটাই অবহেলিত। যদিও বহুবার তিনি শ্রীমুখে বলেছিলেন, “আমি রসায়নবিদ হয়েছি নেহাতই ভুলবশত। আমার অনুরাগ ছিল ইতিহাস, জীবনী সাহিত্য ও সাধারণ সাহিত্যে।" ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি যে রসায়নাচার্য প্রফুল্লচন্দ্র বাঙালির সাহিত্যচর্চার অতি সুপ্রাচীন প্রতিষ্ঠান বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতির পদ অলংকৃত করেছিলেন নেহাত এক-আধবার নয়, সব মিলিয়ে ন' বার (বাংলা ১৩০৮, ১৩১০, ১৩১৬-১৭, ১৩২৭, ১৩৩৪-৩৭ সালে)। মায় একটানা চার বছর (১৩৩৮-৪১) উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতির গুরুদায়িত্বও সামলেছেন। সুতরাং বিজ্ঞানাচার্যের সাহিত্যানুয়াগকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

যাই হোক, 'বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার' গ্রন্থটিই যে কর্মবিমুখ, অলস, চাকরি-প্রিয়, হীনমন্যতায় ভোগা বাঙালিকে নিয়ে দুরদর্শী প্রফুল্লচন্দ্রের আদিতম গ্রন্থ তাতে সন্দেহ নেই। কারণ দেখা যাচ্ছে এরপর ১৯২০ সাল থেকে বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত একের পর এক প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। যেমন ‘অন্নসমস্য ও বাঙালির নিশ্চেষ্টতা’ (মাসিক বসুমতী, ফাল্গুন ১৩২৯), 'বাঙালি কোথায় গেল?' (প্রবাসী, ১৩৩৯), বাঙালি কোথায়?' (আনন্দবাজার পুজা সংখ্যা, ১৩৩৯), 'বাঙালির শক্তিসামর্থের অপব্যবহার ও বর্তমান সমস্যা'
(মার্সিক বসুমতী, আষাঢ় ১৩৩১), 'কৃষি, ব্যবসা ও বাঙালি যুবকের অন্নসমস্যা' (ভারতবর্ষ, চৈত্র ১৩৩৫), ‘শ্রমের মর্যাদাবোধ ও বাঙালির অন্নসমস্যায় পরাজয়' (প্রবাসী, আশ্বিন ১৩৪০), 'বাঙালি তুমি কি ধ্বংসসাগরে ঝাপ দিবে বলিয়া প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছ’ (ভারতবর্য, কার্তিক ১৩৪৪)- এমনই সব অজস্র প্রবন্ধ। এই নিয়ে আরও কিছু গ্রন্থও লিখেছেন তিনি।
বাঙালির মস্তিষ্কের উৎকর্ষতার প্রতি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের শ্রদ্ধার কোনো খামতি ছিল না। কিন্তু তার মাত্রাতিরিক্ত অপব্যবহার যে ‘শীর্ণ দেহ, রক্তহীন বিবর্ণ, জ্যোতিহীন চক্ষু, অনাহার-ক্লিষ্ট, অসহায়, নৈরাশ্যপীড়িত, মানসিক অবসাদগ্রস্ত বাঙালি জাতির সৃষ্টি করেছিল তা তাঁর কাছে যথেষ্ট শিরপীড়ার কারণ হয়। নিজের জীবনচরিত ‘আত্মচরিত’-এ তাই তিনি লিখেছেন, 'আমি বাঙালি চরিত্র বিশ্লেষণ করিয়া তাহার দোষ-ত্রুটি দেখাইতে দ্বিধা করি নাই। অস্ত্রচিকিৎসকের মতই আমি তাহার দেহে ছুরি চালাইয়াছি এবং ব্যাধিগ্রস্ত অংশ দূর করিয়া তাহাতে ঔষধ প্রয়োগ করিতে চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু বাঙালি আমারই স্বজাতি এবং তাহাদের দোষ-ত্রুটির আমিও অংশভাগী। তাহাদের যেসব গুণ আছে, তাহার জন্যও আমি গর্বিত, সুতরাং বাঙালিদের দোষ-কীর্তন করিবার অধিকার আমার আছে।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র নিজে ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তাই বাঙালির ব্যবসা-বিমুখতা তাকে আদৌ খুশি করতে পারেনি। আলোচ্য গ্রন্থে এই নিয়ে তার মনোবেদনা সুপরিস্ফুট। জীবনের যাবতীয় সঞ্চিত অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৪০ সালের ৮ ডিসেম্বর অল ইন্ডিয়া রেডিও-র কলকাতা স্টেশন থেকে প্রচারিত বেতার-বার্তায় বাঙালির অধঃপতনের কথা তুলে ধরেছিলেন তিনি- ‘সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগে বাংলার যে চেহারা আমার চোখে পড়েছে আজ তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তখন বাঙালির ছিল গোলাভরা ধান, দেহ-জোড়া স্বাস্থ্য, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ। কামার, কুমোর, ধোপা, নাপিত সব ছিল বাঙালি। গেরস্ত ঘরে ঝি চাকর সবই ছিল বাংলা দেশের লোক। জাতিগত বৃত্তি মেনে তারা সুখে না হলেও স্বচ্ছন্দে দিন কাটাত। গ্রামে-গ্রামে ছোট-খাট মুদির দোকান ছিল তিলি সম্প্রদায়ের একচেটিয়া। একেবারে আলাদা মণিহারি দোকানেরও সৃষ্টি তখন হয়নি। সত্যি কথা বলতে কী, তখন লোকের এত মণিহারি জিনিসেরও দরকার হত না। বিলাসিতার মোহ পঁচাত্তর বছর আগে বাংলাকে এমন করে পেয়ে বসেনি। আজকের দিনের অবস্থা বক্তৃতা করে বলার কিছু দরকার নেই। পেটে ভাত নেই, পরনে ছেঁড়া কাপড়, চোখে নিরাশা নিয়ে হাজার হাজার ছেলে 'হা চাকরি হা চাকরি' করে ঘুরে বেড়াচ্ছে— এ দেখলে কার না দুঃখ হয়।
আক্ষেপ করে বলেছিলেন 'কী কুক্ষণেই না আমাদের মাথায় চাকরির নেশা ঢুকেছিল তা ভাবলে দুঃখ হয়। চাকরি পেয়ে আমরা ভাবলুম দিন এমনি করেই যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য রসাতলে দিয়ে আর একটা কাজে আমরা নিজেদের জড়িয়ে ফেললুম— সেটা হল জমিদারি। চাকরি আর জমিদারির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ডিগ্রির মোহ এল। চাকরি করে জমিদারি কেনা হল একটা নেশা, আর ছেলেদের ইস্কুল-কলেজে পাঠাতে আরম্ভ করা হল একটা সাধারণ নিয়ম। এমনি করে ক্রমাগত সাতপুরুষ ধরে হয় চাকরি নয়ত জমিদারি— এই নিয়ে মেতে রইল। এখন জমিদারি গেল দেনার দায়ে- ব্যবসা গেল বুদ্ধির দোষে।'
প্রফুল্লচন্দ্র স্বয়ং ছিলেন একাধারে সরস্বতীর বরপুত্র, অন্যদিকে লক্ষ্মীর কৃপালাভেও বঞ্চিত হননি। শিক্ষিত বাঙালির ব্যবসা সম্পর্কে যে ছুৎমার্গ রয়েছে, এই গ্রন্থে তা অপনোদনে প্রয়াসী হয়েছেন আচার্যদেব। জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে তাঁর সাহিত্য-জীবনের প্রবেশদ্বারস্বরূপ আলোচ্য গ্রন্থটির নামোল্লেখ করে আশা প্রকাশ করেছিলেন বাঙালির মানসিকতা হয়তো পাল্টাচ্ছে। 'মধ্যবিত্ত বাঙালির বেকার সমস্যা’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, গত ২৫-৩০ বৎসর ধরিয়া আমি দেশের সর্বত্র চিৎকার করিয়া বলিয়া বেড়াইতেছি যে, বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতির অনুসরণ করিয়া বাঙালি জাতি অর্থনীতিক হিসাবে আত্মহত্যা করিতে বসিয়াছে। 'বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার’ পুস্তকে বহুদিন পূর্বে আমি যে বাঙালি জাতিকে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলাম, আজ বহু বিলম্ব হইলেও সকলেই তাহা স্পষ্টভাবে বুঝিতে সমর্থ হইয়াছেন' (গৃহস্থ মঙ্গল, জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১)। তবে এখানে একটা কথা বলা দরকার। বাঙালির বকলমে গোটা ভারতবর্ষের দুরবস্থা ও দারিদ্র-ও যে আচার্যের যথেষ্ট মনোবেদনার কারণ হয়েছিল আলোচ্য গ্রন্থে সে নিদর্শনও বিরল নয়।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষিতে এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের বাণীর প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে আমরা হয়ত ব্যর্থ হয়েছি। কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে আজও কি আদৌ আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মোহ, কর্মবিমুখতা, চাকুরিপ্রিয়তা প্রভৃতি প্রফুল্লচন্দ্র-বর্ণিত ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পেরেছি? আর এখানেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের শতবর্ষাধিক প্রাচীন গ্রন্থটির প্রাসঙ্গিকতা। একশো বছরেরও বেশি সময়ের দূরত্ব ঘুচিয়ে আচার্য-বাণী বাঙালির কর্ণকুহরে প্রবেশ করে তার বহু বছরের নিদ্রা ভাঙালে তার সার্ধশত জন্মবর্ষে প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদিত হবে। অতিগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় গ্রন্থে উল্লিখিত কয়েকটি বিষয়ের টীকা প্রবন্ধের শেষে সম্পাদকীয় সংযোজন অংশে প্রদত্ত হল।- অর্ণব নাগ

বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এই পোষ্ট হইতে একটি সময়োপযোগী অসাধারণ প্রবন্ধ 'বাঙালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার' এর বাংলা পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।

No comments:

Post a Comment