সেরা কিশোর গল্প- লিও টলস্টয় বাংলা বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- সেরা কিশোর গল্প
লেখক- লিও টলস্টয়
সম্পাদনা- শাহিদুল আলম
বইয়ের ধরন- কিশোর সাহিত্য
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৭২
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ৯এমবি
প্রিন্ট খুব ভালো, জলছাপ মুক্ত
মানবপ্রতিভার অন্যতম বিস্ময় লিও টলস্টয় বিশ্বসাহিত্যের সেরা শিল্পীদের একজন। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, কাল, ভূগোল আর ইতিহাসের সবরকম সীমারেখা লঙ্ঘন করে তিনি মানুষের জন্যে রেখে গেছেন এক কালজয়ী উত্তরাধিকার। রাশিয়ার লেখক লিওনিদ লিওন একবার বলেছিলেন : “আমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে আমরা ধনী, কারণ আমরা টলস্টয়ের উত্তরপুরুষ।” অন্যদিকে বলা হয়ে থাকে, গত পাচশো বছরে পৃথিবীতে এমন চারজন সাহিত্যিক আবির্ভূত হয়েছেন যাঁদেরকে গ্রিক পুরাণের হারকিউলাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়। নিজ নিজ দেশকালের গভীরে প্রবেশ করে জগৎ ও জীবনের এক সর্বকালীন সুমহান তাৎপর্য তাঁরা আবিষ্কার করেছেন। তাই তারা শুধু আপন দেশের শ্রেষ্ঠ লেখক নন, তারা বিশ্বশ্রেষ্ঠ। এই চারজন লেখক হলেন—ইংল্যান্ডের শেক্সপিয়র, জার্মানির গ্যাটে, রাশিয়ার টলস্টয় এবং ভারতের রবীন্দ্রনাথ।
একথা সত্যি যে, টলস্টয়ের নামের আগে বাছা-বাছা কিছু বিশেষণ প্রয়াোগ করে আসল লেখকটির কিছুই বোঝানো সম্ভব নয়। বিরাশি বছরের দীর্ঘজীবনে তিনি লেখক হিসেবে তো বটেই; জটিল দার্শনিক, সামাজিক, নৈতিক ও নীতিশাস্ত্রীয় এমনকি ব্যক্তিগত জীবনভাবনা দিয়েও বারবার জগতের মানুষকে আলোড়িত করেছিলেন। বিশ্বসাহিত্যের পাঠকদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় যে-উপন্যাসগুলোর নাম 'যুদ্ধ ও শাস্তি' ; 'আন্না কারেনিনা' এবং 'পুনরুত্থান'; লেখকদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই লেখকের জীবনীপঞ্জিটি আমাদের তলিয়ে দেখা কিঞ্চিৎ জরুরি।
১৮২৮ সালের ২৮ আগস্ট পারিবারিক জমিদারি ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় লিও নিকলায়েভিচ টলস্টয়ের জন্ম। জন্মসূত্রে তিনি রাশিয়ার অভিজাতশ্রেণীর একজন ছিলেন। তার দু'বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হয়। ভাইবোন-সমেত টলস্টয় লালিত হন খালার কাছে, ইয়াস্নায় পলিয়ানার উন্মুক্ত গ্রামীণ পরিবেশে। সেকালের রাশিয়ার অভিজাতদের উপযুক্ত শিক্ষার পাশাপাশি ফরাসি ও জর্মন ভাষা রপ্ত করেন। পাচবছর বয়সেই টলস্টয় ফরাসি ও রুশি বর্ণমালা রপ্ত করতে পেরেছিলেন। শৈশবে তিনি আদুরে, অভিমানী, জেদি, আত্মসচেতন ও ছিঁচকাঁদুনে ছেলে ছিলেন। অপরের দুঃখকষ্ট বিন্দুমাত্র সইতে পারতেন না, নিজেও মানসিক আঘাত পেতেন সামান্য কারণেই। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা ভেবে বিপত্নীক পিতা টলস্টয়-এর ন'বছর বয়সে গ্রাম ছেড়ে মস্কো শহরে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পাঁচমাস পরই অকস্মাৎ পিতার মৃত্যু হয়। খালার আদরে এবং বারোজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে এখানে সবার পড়াশোনা এগিয়ে চলে।
টলস্টয় দুর্দমনীয়রাপে আত্মসচেতন ও জেদি হয়ে ওঠেন। আহত অহংবোধে একবার দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। ভাগ্য ভালো, স্রেফ ১৮ ঘণ্টা অজ্ঞান থেকে নির্বিঘ্নে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান। নিজের চেহারা সম্বন্ধে হীনমন্যতা থাকায় ছেলে বা মেয়ে যারাই সুন্দর তাদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন। লিউবোফ নামে প্রায় সমবয়সী এক বালিকাকে অপরের সাথে কথা বলতে দেখে এতই ঈর্ষাম্বিত হন যে তাকে ব্যালকনি থেকে ফেলে দেন। বেচারি মেয়েটি ভালোমতো জখম হয়, সারতে সময় লাগে। ভাগ্যৱহস্য এই যে, এই মেয়েটির কন্যা সোফিয়াকে তিনি পঁচিশ বছর বয়সে বিবাহ করেন।
বারো বছর বয়সেই বালক টলস্টয় লিখার চেষ্টায় গোপনে খাতা ভরাতে শুরু করেন। তার মনোভূমি তৈরি হয় বাইবেল, আরব্যরজনী, রাশিয়ার লোককথা, পুশকিনের কবিতা পাঠের মাধ্যমে।
ষোলো বছর বয়সে ভর্তি হন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে, উদ্দেশ্য কূটনীতিবিদের কর্মজীবন গ্রহণের জন্য তৈরি হওয়া। নিজেকে ক্রমাগত আয়নায় দেখেন আর নিজের বিরুদ্ধে বিতৃষ্ণা পুঞ্জীভূত হয়ঃ এই খুদে খুদে পাংশুটে চোখ। বুদ্ধিমত্তার কোনো চাপই নেই, নির্বোধ চাটনি সবচেয়ে জঘন্য, কুসিত, বদখত.... আমার মুখ নিতান্ত সাধারণ চাষাভূষার, আমার হাত-পাও সেরকমই লম্বাটে।
সতেরো বছরের তরুণ টলস্টয় নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা চাওয়া-পাওয়ার স্বরূপ চিনতে চাওয়ার নিদারুণ শ্রম ও উৎকণ্ঠা পূর্ণ! শরীরময় উষ্ণ আকাক্ষা অথচ পবিত্রতার বোধকে নিয়ত বাচিয়ে রাখার জন্য প্রার্থনা ও কৃচ্ছসাধনার কাছে আত্মসমর্পণ—এই পরস্পরবিরোধী চরিত্র টলস্টয়ের মনে এক জটিল ও অন্তর্ঘাতময় আবহের সূত্রপাত করে। এই দ্বন্দ্বের দুঃসহ হাত থেকে তিনি পরবর্তী জীবনের একটি মুহর্তও রেহাই পাননি। বিশেষ করে উনিশ বছর বয়সে যখন তিনি জীবনের নীতিমালায় প্রতিজ্ঞা লিপিবদ্ধ করছেন :“সমগ্র জীবনের লক্ষ্যবিন্দু চাই, অপেক্ষাকৃত অস্পসময়ের জন্য লক্ষ্য এবং একেকটি বছরের জন্যেও ; প্রতিমাসে জন্য, প্রতিসপ্তাহের জন্য, প্রতিদিনের জন্য, প্রতিঘন্টার জন্য এবং প্রতিমিনিটের জন্যও লক্ষ্য চাই ; বৃহত্তম লক্ষ্যের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষ্য বিসর্জন দিতে হবে; মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে, কাজের মাধ্যমে কামনাকে ধ্বংস করব; ভালো হতে হবে, কিন্তু শোরগোল তুলে নয়, যতখানি সম্ভব কম খরচে জীবন নির্বাহ করা চাই, যদি দশগুণও ধনী হই জীবনযাত্রার মান যেন না পাল্টায়" ইত্যাদি।
টলস্টয়ের জীবনের সাধ্য ও সাধনা, ভোগ ও ত্যাগ: সমাজ সত্য ও আত্মিক সত্যের নিরন্তর সংগ্রাম এখন থেকে শুরু হয়, যা আমৃত্যু থামে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও তার শেষ হয় স্বাস্থ্যের অজুহাতে এ বয়সেই। এরপর জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সঙ্গে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়েন এবং গভীরভাবে ভুলে যান সাহিত্যভাবনার সঙ্গে। তার প্রধানতম সাহিত্যকর্মগুলো হচ্ছে, আত্মজীবনীমূলক রচনা 'শৈশব', 'কৈশোর', 'যৌবন', 'কসাক', 'সেভাস্তোপল-এর কাহিনী', 'যুদ্ধ ও শান্তি, ‘আন্না কারেনিনা', 'ইভান ইলিচের মৃত্যু', 'ক্রয়টজার সোনাটা', 'শয়তান', 'পুনরুত্থান', 'হাজি মুরাৎ', ‘ককেসাসের বন্দী', “ফাদার সিয়োগি” ইত্যাদি। এই সমস্ত লেখাগুলো প্রকাশের সঙ্গেসঙ্গেই তিনি নিজদেশে তো বটেই, সারা বিশ্বেই বিপুলভাবে সংবধিত হন। উপন্যাসের জগতে অনেক সমালোচকই ‘যুদ্ধ ও শান্তি'-কে এক নম্বরে স্থান দিয়ে থাকেন। 'আন্না কারেনিনা" প্রকাশের পর আরেক মহান রুশ ঔপন্যাসিক ফিয়দর দস্তয়েভস্কি তাঁকে 'শিল্পের দেবতা' হিসাবে উল্লেখ করে লিখেছেন : 'শিল্প হিসেবে আন্না কারেনিনা সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন। আর রুশসাহিত্যের মহত্তম সামাজিক উপন্যাস হিসেবে বইটিকে শনাক্ত করেছিলেন টমাস মান।
টলস্টয় নিজের আত্মাকে উম্মোচন করে দেখিয়েছেন কখনো-বা স্বনামে, কখনো-বা তারই লেখা গল্প-উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের ছদ্মনামে; সর্বদা ছুটে গেছেন সমকাল ও চলতি হাওয়ার বিপরীতে, লড়েছেন অন্যায়, আলস্য ও হিংসার বিরুদ্ধে, জীর্ণ সভাতার পুঞ্জীভূত কদর্যতার সঙ্গে সংগ্রাম করে গেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন, তাই জনগণের ভেতর প্রগতিশীলরা সান্ত্বনা লাভ করত এই দেখে যে, তাদের নিকটই একজনের হৃদস্পন্দন শোনা যাচ্ছে—যে-হাদয় কলুষিত হবে না কখনো, তীক্ষ্মদৃষ্টি মেলে তিনি তাকিয়ে দেখছেন তাদের অমানুষিক শ্রম ও বঞ্চনা, কান পেতে শুনে যাচ্ছেন তাদের ক্রন্দন ও সঙ্গীত আর সময় হলে এ-সবই পাস্তুরিত হবে খাঁটি সোনায়, ভবিষ্যতের নতুন পৃথিবীর ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে যাবে।
ক্রুদ্ধ ঝঙ্কাবেগ ও মৃদুতম বায়ুহিল্লোল, মরচুক্ষর পক্ষে যা ধারণা করা সম্ভব নয় এবং যা চোখ এড়িয়ে যায় মানুষের সেরকম বিশাল ও ক্ষুদ্র উভয়ই, মানুষের ব্যক্তিসত্তার মধ্যাহ্নপ্রাখর্য ও অস্তরাগ ধরা দিয়েছিল তার চোখে।
ক্ষুদ্র এই কিশোরপাঠ্য সংকলনের গল্পগুলো পড়তে গেলেও উপরোল্লেখিত মস্তব্যটির যথার্থতা লক্ষ করা যাবে। টলস্টয়ের বর্ণনা-কৌশলের অদ্ভুত দৃষ্টিতে যেন কোনো ঘটনার সামান্যতম অংশও বাদ যায় না—চোখের সামনে ফুটে ওঠে গল্পের সবটুকুই।
এই গ্রন্থের সব গুলো গল্পই কিশোরদের মনোভূমি স্পর্শ করে লেখা। প্রতিটি গল্প টলস্টয় শেষ করেছেন মানুষের, সহজাত সরলতা ও সততার প্রতি দৃঢ় আস্থা স্থাপন করে—যাতে ক্ষুদে পাঠকেরা জীবনের এক একটি সত্যকে গল্পের আস্বাদ পেতে পেতেই পরম সত্যরূপে উপলব্ধি করতে পারে। কেননা আত্মার পরিশুদ্ধ আনন্দই টলস্টয় প্রত্যাশা করতেন সবচেয়ে বেশি।
এই বইয়ের আটটি সুন্দর গল্প পাঠ-শেষে-তরুশ পাঠকেরা টলস্টয় সম্পর্কে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে বলেই আমাদের ধারণা। কেননা মনে রাখতে হবে, টলস্টয় পাঠ না করার অর্থ হচ্ছে বিশ্বসাহিত্যের বিশাল একটি রত্নভাণ্ডার থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা।- শাহিদুল আলম
এই বইতে যেসকল গল্পগুলি কিশোরদের জন্য রয়েছে-
শিশুর সরলতা
মানুষ কী নিয়ে বাঁচে
মুরগির ডিমের মত বড় শস্যকণা
এক টুকরো রুটি
মানুষের ভালোবাসা
ঈশ্বর সবই দেখতে পান
কতটা জমি দরকার
আগুনের একটি কনা
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় কিশোর/কিশোরী পাঠকগণ, তোমরা এই পোষ্ট হইতে অসাধারণ একটি বই- 'সেরা কিশোর গল্প- লিও টলস্টয়'-এর পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
ডিজিটাল বইয়ের নাম- সেরা কিশোর গল্প
লেখক- লিও টলস্টয়
সম্পাদনা- শাহিদুল আলম
বইয়ের ধরন- কিশোর সাহিত্য
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৭২
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ৯এমবি
প্রিন্ট খুব ভালো, জলছাপ মুক্ত
মানবপ্রতিভার অন্যতম বিস্ময় লিও টলস্টয় বিশ্বসাহিত্যের সেরা শিল্পীদের একজন। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, কাল, ভূগোল আর ইতিহাসের সবরকম সীমারেখা লঙ্ঘন করে তিনি মানুষের জন্যে রেখে গেছেন এক কালজয়ী উত্তরাধিকার। রাশিয়ার লেখক লিওনিদ লিওন একবার বলেছিলেন : “আমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে আমরা ধনী, কারণ আমরা টলস্টয়ের উত্তরপুরুষ।” অন্যদিকে বলা হয়ে থাকে, গত পাচশো বছরে পৃথিবীতে এমন চারজন সাহিত্যিক আবির্ভূত হয়েছেন যাঁদেরকে গ্রিক পুরাণের হারকিউলাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়। নিজ নিজ দেশকালের গভীরে প্রবেশ করে জগৎ ও জীবনের এক সর্বকালীন সুমহান তাৎপর্য তাঁরা আবিষ্কার করেছেন। তাই তারা শুধু আপন দেশের শ্রেষ্ঠ লেখক নন, তারা বিশ্বশ্রেষ্ঠ। এই চারজন লেখক হলেন—ইংল্যান্ডের শেক্সপিয়র, জার্মানির গ্যাটে, রাশিয়ার টলস্টয় এবং ভারতের রবীন্দ্রনাথ।
একথা সত্যি যে, টলস্টয়ের নামের আগে বাছা-বাছা কিছু বিশেষণ প্রয়াোগ করে আসল লেখকটির কিছুই বোঝানো সম্ভব নয়। বিরাশি বছরের দীর্ঘজীবনে তিনি লেখক হিসেবে তো বটেই; জটিল দার্শনিক, সামাজিক, নৈতিক ও নীতিশাস্ত্রীয় এমনকি ব্যক্তিগত জীবনভাবনা দিয়েও বারবার জগতের মানুষকে আলোড়িত করেছিলেন। বিশ্বসাহিত্যের পাঠকদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় যে-উপন্যাসগুলোর নাম 'যুদ্ধ ও শাস্তি' ; 'আন্না কারেনিনা' এবং 'পুনরুত্থান'; লেখকদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই লেখকের জীবনীপঞ্জিটি আমাদের তলিয়ে দেখা কিঞ্চিৎ জরুরি।
১৮২৮ সালের ২৮ আগস্ট পারিবারিক জমিদারি ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় লিও নিকলায়েভিচ টলস্টয়ের জন্ম। জন্মসূত্রে তিনি রাশিয়ার অভিজাতশ্রেণীর একজন ছিলেন। তার দু'বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হয়। ভাইবোন-সমেত টলস্টয় লালিত হন খালার কাছে, ইয়াস্নায় পলিয়ানার উন্মুক্ত গ্রামীণ পরিবেশে। সেকালের রাশিয়ার অভিজাতদের উপযুক্ত শিক্ষার পাশাপাশি ফরাসি ও জর্মন ভাষা রপ্ত করেন। পাচবছর বয়সেই টলস্টয় ফরাসি ও রুশি বর্ণমালা রপ্ত করতে পেরেছিলেন। শৈশবে তিনি আদুরে, অভিমানী, জেদি, আত্মসচেতন ও ছিঁচকাঁদুনে ছেলে ছিলেন। অপরের দুঃখকষ্ট বিন্দুমাত্র সইতে পারতেন না, নিজেও মানসিক আঘাত পেতেন সামান্য কারণেই। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা ভেবে বিপত্নীক পিতা টলস্টয়-এর ন'বছর বয়সে গ্রাম ছেড়ে মস্কো শহরে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পাঁচমাস পরই অকস্মাৎ পিতার মৃত্যু হয়। খালার আদরে এবং বারোজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে এখানে সবার পড়াশোনা এগিয়ে চলে।
টলস্টয় দুর্দমনীয়রাপে আত্মসচেতন ও জেদি হয়ে ওঠেন। আহত অহংবোধে একবার দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। ভাগ্য ভালো, স্রেফ ১৮ ঘণ্টা অজ্ঞান থেকে নির্বিঘ্নে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান। নিজের চেহারা সম্বন্ধে হীনমন্যতা থাকায় ছেলে বা মেয়ে যারাই সুন্দর তাদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন। লিউবোফ নামে প্রায় সমবয়সী এক বালিকাকে অপরের সাথে কথা বলতে দেখে এতই ঈর্ষাম্বিত হন যে তাকে ব্যালকনি থেকে ফেলে দেন। বেচারি মেয়েটি ভালোমতো জখম হয়, সারতে সময় লাগে। ভাগ্যৱহস্য এই যে, এই মেয়েটির কন্যা সোফিয়াকে তিনি পঁচিশ বছর বয়সে বিবাহ করেন।
বারো বছর বয়সেই বালক টলস্টয় লিখার চেষ্টায় গোপনে খাতা ভরাতে শুরু করেন। তার মনোভূমি তৈরি হয় বাইবেল, আরব্যরজনী, রাশিয়ার লোককথা, পুশকিনের কবিতা পাঠের মাধ্যমে।
ষোলো বছর বয়সে ভর্তি হন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে, উদ্দেশ্য কূটনীতিবিদের কর্মজীবন গ্রহণের জন্য তৈরি হওয়া। নিজেকে ক্রমাগত আয়নায় দেখেন আর নিজের বিরুদ্ধে বিতৃষ্ণা পুঞ্জীভূত হয়ঃ এই খুদে খুদে পাংশুটে চোখ। বুদ্ধিমত্তার কোনো চাপই নেই, নির্বোধ চাটনি সবচেয়ে জঘন্য, কুসিত, বদখত.... আমার মুখ নিতান্ত সাধারণ চাষাভূষার, আমার হাত-পাও সেরকমই লম্বাটে।
সতেরো বছরের তরুণ টলস্টয় নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা চাওয়া-পাওয়ার স্বরূপ চিনতে চাওয়ার নিদারুণ শ্রম ও উৎকণ্ঠা পূর্ণ! শরীরময় উষ্ণ আকাক্ষা অথচ পবিত্রতার বোধকে নিয়ত বাচিয়ে রাখার জন্য প্রার্থনা ও কৃচ্ছসাধনার কাছে আত্মসমর্পণ—এই পরস্পরবিরোধী চরিত্র টলস্টয়ের মনে এক জটিল ও অন্তর্ঘাতময় আবহের সূত্রপাত করে। এই দ্বন্দ্বের দুঃসহ হাত থেকে তিনি পরবর্তী জীবনের একটি মুহর্তও রেহাই পাননি। বিশেষ করে উনিশ বছর বয়সে যখন তিনি জীবনের নীতিমালায় প্রতিজ্ঞা লিপিবদ্ধ করছেন :“সমগ্র জীবনের লক্ষ্যবিন্দু চাই, অপেক্ষাকৃত অস্পসময়ের জন্য লক্ষ্য এবং একেকটি বছরের জন্যেও ; প্রতিমাসে জন্য, প্রতিসপ্তাহের জন্য, প্রতিদিনের জন্য, প্রতিঘন্টার জন্য এবং প্রতিমিনিটের জন্যও লক্ষ্য চাই ; বৃহত্তম লক্ষ্যের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষ্য বিসর্জন দিতে হবে; মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে, কাজের মাধ্যমে কামনাকে ধ্বংস করব; ভালো হতে হবে, কিন্তু শোরগোল তুলে নয়, যতখানি সম্ভব কম খরচে জীবন নির্বাহ করা চাই, যদি দশগুণও ধনী হই জীবনযাত্রার মান যেন না পাল্টায়" ইত্যাদি।
টলস্টয়ের জীবনের সাধ্য ও সাধনা, ভোগ ও ত্যাগ: সমাজ সত্য ও আত্মিক সত্যের নিরন্তর সংগ্রাম এখন থেকে শুরু হয়, যা আমৃত্যু থামে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও তার শেষ হয় স্বাস্থ্যের অজুহাতে এ বয়সেই। এরপর জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সঙ্গে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়েন এবং গভীরভাবে ভুলে যান সাহিত্যভাবনার সঙ্গে। তার প্রধানতম সাহিত্যকর্মগুলো হচ্ছে, আত্মজীবনীমূলক রচনা 'শৈশব', 'কৈশোর', 'যৌবন', 'কসাক', 'সেভাস্তোপল-এর কাহিনী', 'যুদ্ধ ও শান্তি, ‘আন্না কারেনিনা', 'ইভান ইলিচের মৃত্যু', 'ক্রয়টজার সোনাটা', 'শয়তান', 'পুনরুত্থান', 'হাজি মুরাৎ', ‘ককেসাসের বন্দী', “ফাদার সিয়োগি” ইত্যাদি। এই সমস্ত লেখাগুলো প্রকাশের সঙ্গেসঙ্গেই তিনি নিজদেশে তো বটেই, সারা বিশ্বেই বিপুলভাবে সংবধিত হন। উপন্যাসের জগতে অনেক সমালোচকই ‘যুদ্ধ ও শান্তি'-কে এক নম্বরে স্থান দিয়ে থাকেন। 'আন্না কারেনিনা" প্রকাশের পর আরেক মহান রুশ ঔপন্যাসিক ফিয়দর দস্তয়েভস্কি তাঁকে 'শিল্পের দেবতা' হিসাবে উল্লেখ করে লিখেছেন : 'শিল্প হিসেবে আন্না কারেনিনা সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন। আর রুশসাহিত্যের মহত্তম সামাজিক উপন্যাস হিসেবে বইটিকে শনাক্ত করেছিলেন টমাস মান।
টলস্টয় নিজের আত্মাকে উম্মোচন করে দেখিয়েছেন কখনো-বা স্বনামে, কখনো-বা তারই লেখা গল্প-উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের ছদ্মনামে; সর্বদা ছুটে গেছেন সমকাল ও চলতি হাওয়ার বিপরীতে, লড়েছেন অন্যায়, আলস্য ও হিংসার বিরুদ্ধে, জীর্ণ সভাতার পুঞ্জীভূত কদর্যতার সঙ্গে সংগ্রাম করে গেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন, তাই জনগণের ভেতর প্রগতিশীলরা সান্ত্বনা লাভ করত এই দেখে যে, তাদের নিকটই একজনের হৃদস্পন্দন শোনা যাচ্ছে—যে-হাদয় কলুষিত হবে না কখনো, তীক্ষ্মদৃষ্টি মেলে তিনি তাকিয়ে দেখছেন তাদের অমানুষিক শ্রম ও বঞ্চনা, কান পেতে শুনে যাচ্ছেন তাদের ক্রন্দন ও সঙ্গীত আর সময় হলে এ-সবই পাস্তুরিত হবে খাঁটি সোনায়, ভবিষ্যতের নতুন পৃথিবীর ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে যাবে।
ক্রুদ্ধ ঝঙ্কাবেগ ও মৃদুতম বায়ুহিল্লোল, মরচুক্ষর পক্ষে যা ধারণা করা সম্ভব নয় এবং যা চোখ এড়িয়ে যায় মানুষের সেরকম বিশাল ও ক্ষুদ্র উভয়ই, মানুষের ব্যক্তিসত্তার মধ্যাহ্নপ্রাখর্য ও অস্তরাগ ধরা দিয়েছিল তার চোখে।
ক্ষুদ্র এই কিশোরপাঠ্য সংকলনের গল্পগুলো পড়তে গেলেও উপরোল্লেখিত মস্তব্যটির যথার্থতা লক্ষ করা যাবে। টলস্টয়ের বর্ণনা-কৌশলের অদ্ভুত দৃষ্টিতে যেন কোনো ঘটনার সামান্যতম অংশও বাদ যায় না—চোখের সামনে ফুটে ওঠে গল্পের সবটুকুই।
এই গ্রন্থের সব গুলো গল্পই কিশোরদের মনোভূমি স্পর্শ করে লেখা। প্রতিটি গল্প টলস্টয় শেষ করেছেন মানুষের, সহজাত সরলতা ও সততার প্রতি দৃঢ় আস্থা স্থাপন করে—যাতে ক্ষুদে পাঠকেরা জীবনের এক একটি সত্যকে গল্পের আস্বাদ পেতে পেতেই পরম সত্যরূপে উপলব্ধি করতে পারে। কেননা আত্মার পরিশুদ্ধ আনন্দই টলস্টয় প্রত্যাশা করতেন সবচেয়ে বেশি।
এই বইয়ের আটটি সুন্দর গল্প পাঠ-শেষে-তরুশ পাঠকেরা টলস্টয় সম্পর্কে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে বলেই আমাদের ধারণা। কেননা মনে রাখতে হবে, টলস্টয় পাঠ না করার অর্থ হচ্ছে বিশ্বসাহিত্যের বিশাল একটি রত্নভাণ্ডার থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা।- শাহিদুল আলম
এই বইতে যেসকল গল্পগুলি কিশোরদের জন্য রয়েছে-
শিশুর সরলতা
মানুষ কী নিয়ে বাঁচে
মুরগির ডিমের মত বড় শস্যকণা
এক টুকরো রুটি
মানুষের ভালোবাসা
ঈশ্বর সবই দেখতে পান
কতটা জমি দরকার
আগুনের একটি কনা
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় কিশোর/কিশোরী পাঠকগণ, তোমরা এই পোষ্ট হইতে অসাধারণ একটি বই- 'সেরা কিশোর গল্প- লিও টলস্টয়'-এর পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
No comments:
Post a Comment