ভৌতিক অমনিবাস- পার্থ চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভূতের গল্পের বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- কিশোর অপু
লেখক- পার্থ চট্টোপাধ্যায়
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ২১১
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ১৬এমবি
জলছাপমুক্ত, ঝকঝকে প্রিন্ট
সারাজীবন ভূতের পিছনে ছুটে ভূতের দেখা মিলল না। তবে অনেক গল্প পেলাম যেগুলি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত হয়ে ভূতসমাজে একজন ভূতের গল্প লেখক হিসাবে আমায় পরিচিতি দিয়েছে। আমার বাড়ি ছিল অজ পাড়াগায়ে। এখন সেটি শহর হয়ে উঠলেও আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন সেখানে প্রচুর বনজঙ্গল ছিল। আর সেই জঙ্গলে বাঁশগাছে থাকত ভূত, তাল গাছে শাকচুন্নী, বেলগাছে বেম্মদত্যি, ষাঁড়া গাছে মামদো, ধুধু বিলের মধ্যে রাত্তির বেলা চরে বেড়াত আলেয়ারা।
অন্ধকার নামলেই ভূতের ভয় চেপে ধরত। আমাদের একটি পুরনো তেঁতুল গাছ ছিল। একদিন থিয়েটার করে গভীর রাতে সেই তেঁতুলতলা কীভাবে যে পার হয়েছিলাম তা আমিই জানি। শুনতাম অনেকেই ভূতের দেখা পেয়েছে। একবার ভূতে পাওয়া এক বউকেও দেখলাম। ওঝার ভূত ঝাড়াও দেখলাম। কিন্তু যত ভূতের দেখা পেতাম তা স্বপ্নের মধ্যে।
আমাদের গ্রাম থেকে বেশিদূর ছিল না। গতখালি। সেটি এখন বাংলাদেশের মধ্যে। সেই গ্রাম একবার কলেরায় উজাড় হয়ে যায়। তারপর থেকে গতখালি হয়ে ওঠে ভূতেদের পীঠস্থান। গতখালির ভূতের কত গল্প যে শুনেছি। কিন্তু কোন ভুতই চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
তবে একবার প্ল্যানচেট করে আমার এক পরিচিত সাহিত্যিককে এনেছিলাম।
আমার এক কবি বান্ধবী শুকতারা রায় প্ল্যানচেট। জানেন। একদিন তার বাড়িতে গেছি। সেদিন আর এক মহিলাও ছিলেন। শুকতারাকে বললাম, প্ল্যানচেট করলে হয় না ? তিনি রাজি। আমায় মনে মনে এক আত্মার কথা ভাবতে বললেন। আমি এক সাহিত্যিকের নাম করলাম। তারপর তিনজনেই তার কথা ভাবতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে তিনি এলেন। আমরা তিনজনে আঙুল ধরে থাকলাম। এক একটা প্রশ্ন করি আর দেখি আমাদের আঙুল আপনা থেকে এক একটা অক্ষরের ওপর পড়ছে। পর পর সেগুলি সাজালে এক একটি বাক্য। যেমন আমি বললাম, বলুন তো আমার দেশ কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে আঙুল গিয়ে পড়ল দশটি অক্ষরে— গোবরডাঙ্গা। আমি চমকে উঠলাম। আমার দেশ কোথায় ওই দুই মহিলা জানেন না। কিন্তু প্ৰয়াত সাহিত্যিক জানতেন |
তারপর আরও প্রশ্ন। আরও উত্তর। নির্ভুল উত্তর। এই একটি ক্ষেত্র ছাড়া ভূতের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। ভূত সত্যি কি মিথ্যে তাও আমি জানি না। তবে ভূতের গল্প লিখতে মজা লাগে। আনন্দমেলা সম্পাদক কবি নীরেন চক্রবর্তী তুমি বডড ভয় দেখাও বাচ্চাদের। আমি প্ৰতিজ্ঞা করিছ। আর ভয় দেখাব না। ছােটরা জেনে রাখো, ভূত বলে কিছু নেই। ভূত শুধু মজা করার জন্য।
পৃথিবীর সব দেশেই ভৌতিক গল্প লেখা হয়। আমাদের দেশেও কত ভাল ভাল ভূতের গল্প লিখিয়ে আছেন। আমার গল্পে ভূত মিথ্যে হলেও গল্পগুলি সত্যি। যেমন চরিত্র ও বর্ণনাগুলি আমার দেখা পরিবেশ ও আমার চেনা। প্ল্যানচেট নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা তো আগেই বলেছি। এবার সেই প্ল্যানচেটকে নিয়ে এলুম সিং ভুমে ধাতকাঠিজিওওজিক্যাল সার্ভেরশিবিরে। সেখানে আমি একবার খবর করতে গিয়েছিলাম। খাট সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে আমার এক গভীর দুঃখ জড়িয়ে আছে। ইস্কুলের মাইনে দিতে না পারায় আমি যে খাটে শুতাম সেটি ইস্কুলের হেডমাস্টারকে বিক্রি করে মাইনে শোধ করতে হয়। তারপর থেকে স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে শুধু খাট।। ক্যামেরা গল্পের অনুপ্রেরণা স্বামী অভেদানন্দের পরলোক চর্চার বই থেকে। রাত্রির যাত্রী তো আমি নিজেই ছিলাম। থিয়েটার করে রাত দুপুরে একা একা বাড়ি ফেরার গা ছমছমে অভিজ্ঞতা আমি কি সহজে ভুলব।
হাজারির বউ-এর হাজারি আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশেই থাকত। হাজারির কোলে আমি মানুষ হয়েছি। গুরুদাসী ও আমায় খুব ভালবাসত। তাদের কথা আমার চিরদিন মনে থাকবে। আমার ভূতধরা নিছক মজার গল্প। ১৯৮২ সালে আমি পাকিস্তানে যাই ও পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট জিয়ায়ুল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তারপরই লিখি গুপ্তধনের সন্ধানে। সিউড়ির প্রাক্তন এস. পি ভাণ্ডারি সাহেব আমার খুব বন্ধু ছিলেন। তার সঙ্গে কত ঘুরেছি। শকুনের পালকে তাই বীরভূম এসে গেছে। বাদুড় পুরো বানানো গল্প। সর্পিলও তাই তবে ছোটবেলা থেকে আমার ভীষণ সাপের ভয়। দেওঘরে ইলেকট্রিকইন বাড়িতে আমিও কিছুদিন ছিলাম। ভারতীয় শিশুদের বিদেশে দত্তক দেওয়া নিয়ে একদা আমি প্রচুর খবর করেছি। শুধু ছায়ায় সেই দত্তক নেওয়া এক শিশুর কাহিনী আছে। মাদুলি-কবচেআমি বিশ্বাস করি না। তোমাদেরও করতে বলি না। কিন্তু অনেকের মধ্যে মাদুলি কবচে বিশ্ব আছে। আমি তাদের একজনকে নিয়ে লিখেছি একটি কবচোর কাহিনী। প্ৰয়াত শিল্পী ছবি বিশ্বাসের মোটর দুর্ঘটনা থেকে ঘাতক গল্পের প্রেরণা পাই। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ কভার করার জন্য জিপে করে খুলনা যাই। ফেরার পথে জিপটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া এক বাঙালি মেজর কলকাতায় তার বাড়িতে খবর দিতে বলেছিলেন। আমি কলকাতায় পৌঁছে তার স্ত্রীকে নিজে গিয়ে খবরটা দিই৷ এই ঘটনা নিয়ে চাবি গল্পটি। ভূতের বাগান গল্পটি আমার বোনের শ্বশুরের বাগান নিয়ে। তার শ্বশুরমশাই এর জীবদ্দশাতেই বাগানটি হাতছাড়া হয়ে যায়। ছেলেরা খেলার মাঠ করে। তাঁর খুব কষ্ট ছিল এজন্য।
দিল্লির ম্যাজিসিয়ান করুণাশঙ্করকে আমি খুব ভাল চিনতাম। তাঁর সঙ্গে কত আড্ডা দিয়েছি। উনি আমাকে একটি হরিণের চোখ উপহার দেন। তারপর গল্প মাথায় এসে গেল। সাইকেল গল্পটির সঙ্গে আমার ছােটবেলার এক খারাপ স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমার বাবাই এই গল্পের নায়ক। অভাবের জ্বালায় আমার এক নিকট আত্মীয়ের হয়। ছােটবেলার সেই স্মৃতি এখনও আমাকে তাড়া করে। সাইকেল গল্পটি তাই লিখে ফেলি। জাতিস্মর গল্পে আমার ছােটবেলাকার বন্ধুর ছায়া আছে। সে যখন আই এ ক্লাসে পড়ে তখন দূরারোগ্য ব্যধিতে মারা যায়। এক সময় জন্মান্তরবাদের উপর গবেষক প্যারাসাইকোলজিস্ট হেমেন গাঙ্গুলির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। হেমেনবাবু আমায় জাতিস্মরের গল্প শোনাতেন। তখনই আমার গল্পের প্লট মাথায় আসে। ইগলের নখ কলকাতায় এক অর্থ অপরাধীর আত্মহত্যা নিয়ে লেখা। কেউ কেউ বলে পুলিশই তাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল। সেই বাড়ি একদম বানানো গল্প। শুধু আমার পাশের গ্রাম গৈপুরের পটভূমি ছাড়া। আমাদের গ্রামের বিরাট জমিদার বাড়ি ভেঙে ফেলায় আমি খুব মর্মাহত হই। ওই বাড়িতে গুপ্তধন আছে এমন ধারণা ছিল। আমাদের গ্রামের পৈত্রিক বাড়ি দেওয়ানজি বাড়ি খুঁড়তে গিয়ে এক মজুর প্রচুর মোহর পায়। লোকটি সেই এক হাড়ি মোহর নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এইসব ঘটনা মিলে চােরাকুঠির রহস্য লেখা।
দ্বাদশ ব্যক্তি কাল্পনিক গল্প। শেষরাতের সারথি আমার ডাক বাংলোয় এক একগ বাসের অভিজ্ঞতার ওপর লেখা। সত্যি বড় ডাকবাংলোয় রাতে একা থাকতে গায়ে ছমছম করে।
সবশেষ গল্প গুপ্তধনের সন্ধানে লাহোরের পটভূমিতে লেখা। পাকিস্তানে সাতদিন ছিলাম। বহু বিচিত্র মানুষের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়। তাদের নিয়েই নানা গল্পের প্লট মাথায় আসে। যদিও এই গল্পটি নিজক ভূতের গল্প নয়।
আসলে ভূত থাকে আমাদের মত ভূতের গল্প লিখিয়েদের মাথায়। আমার গল্পগুলি পড়ে যদি তাদের সত্যি ভূত বলে মনে হয় তাহলে বুঝব আমার লেখা সার্থক। কারণ গল্পকে সত্যি বানানোই লেখকের কাজ। এইসব গল্পই ছোট ছোট বই এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সব ভূতকে এক জায়গায় করে সম্ভব হল দে’জ পাবলিশিং-এর সুধাংশুশেখর দে-র উৎসাহে। ভূতদের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। - পার্থ চট্টোপাধ্যায়
ভূতের গল্পের বই, ভৌতিক অমনিবাস- পার্থ চট্টোপাধ্যায়
বড়দের মত ছোটদের লেখাতেও সিদ্ধহস্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা প্রচুর রহস্য ও হাসির গল্প আছে। তার বিখ্যাত বই ‘হতাশ হবেন না” ১ম খণ্ডটি স্কুল-কলেজের সব ছাত্রেরই পড়া উচিত। এই অভিমত সব পাঠকের।
গোবরডাঙ্গা খাটরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। গোবরডাঙ্গা হিন্দু কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে বিএ অনার্স পাস করে জীবিকার সন্ধানে চলে আসেন কলকাতায়। সেই সময় এম.এ. পড়তে পড়তেই যোগ দেন সাংবাদিকতায়। সাংবাদিক হিসাবে পার্থবাবুর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। বহুবার তিনি সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। পেয়েছেন নানা ফেলোশিপ, পুরস্কার, সম্মানীয় পদ। হাওড়া পণ্ডিত সমাজ তাকে সাহিত্য রত্ন উপাধি দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পান সর্বোচ্চ পিএইচডি ডিগ্রি। ৭৫ খানির উপর বইয়ের লেখক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছোটদের লেখায় সিদ্ধহস্ত। ভূতের গল্প লেখায় তিনি যে সেরা সাহিত্যিকদের একজন, ভৌতিক অমনিবাসের গল্পগুলিই সেটার প্রমান।
'ভৌতিক অমনিবাস- পার্থ চট্টোপাধ্যায়' এই বইটিতে মোট ৩০টি গল্প আছে।
বাংলা ভূতের গল্পের বই- 'ভৌতিক অমনিবাস- পার্থ চট্টোপাধ্যায়' পিডিএফ সংগ্রহ করুন
ডিজিটাল বইয়ের নাম- কিশোর অপু
লেখক- পার্থ চট্টোপাধ্যায়
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ২১১
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ১৬এমবি
জলছাপমুক্ত, ঝকঝকে প্রিন্ট
সারাজীবন ভূতের পিছনে ছুটে ভূতের দেখা মিলল না। তবে অনেক গল্প পেলাম যেগুলি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত হয়ে ভূতসমাজে একজন ভূতের গল্প লেখক হিসাবে আমায় পরিচিতি দিয়েছে। আমার বাড়ি ছিল অজ পাড়াগায়ে। এখন সেটি শহর হয়ে উঠলেও আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন সেখানে প্রচুর বনজঙ্গল ছিল। আর সেই জঙ্গলে বাঁশগাছে থাকত ভূত, তাল গাছে শাকচুন্নী, বেলগাছে বেম্মদত্যি, ষাঁড়া গাছে মামদো, ধুধু বিলের মধ্যে রাত্তির বেলা চরে বেড়াত আলেয়ারা।
অন্ধকার নামলেই ভূতের ভয় চেপে ধরত। আমাদের একটি পুরনো তেঁতুল গাছ ছিল। একদিন থিয়েটার করে গভীর রাতে সেই তেঁতুলতলা কীভাবে যে পার হয়েছিলাম তা আমিই জানি। শুনতাম অনেকেই ভূতের দেখা পেয়েছে। একবার ভূতে পাওয়া এক বউকেও দেখলাম। ওঝার ভূত ঝাড়াও দেখলাম। কিন্তু যত ভূতের দেখা পেতাম তা স্বপ্নের মধ্যে।
আমাদের গ্রাম থেকে বেশিদূর ছিল না। গতখালি। সেটি এখন বাংলাদেশের মধ্যে। সেই গ্রাম একবার কলেরায় উজাড় হয়ে যায়। তারপর থেকে গতখালি হয়ে ওঠে ভূতেদের পীঠস্থান। গতখালির ভূতের কত গল্প যে শুনেছি। কিন্তু কোন ভুতই চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
তবে একবার প্ল্যানচেট করে আমার এক পরিচিত সাহিত্যিককে এনেছিলাম।
আমার এক কবি বান্ধবী শুকতারা রায় প্ল্যানচেট। জানেন। একদিন তার বাড়িতে গেছি। সেদিন আর এক মহিলাও ছিলেন। শুকতারাকে বললাম, প্ল্যানচেট করলে হয় না ? তিনি রাজি। আমায় মনে মনে এক আত্মার কথা ভাবতে বললেন। আমি এক সাহিত্যিকের নাম করলাম। তারপর তিনজনেই তার কথা ভাবতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে তিনি এলেন। আমরা তিনজনে আঙুল ধরে থাকলাম। এক একটা প্রশ্ন করি আর দেখি আমাদের আঙুল আপনা থেকে এক একটা অক্ষরের ওপর পড়ছে। পর পর সেগুলি সাজালে এক একটি বাক্য। যেমন আমি বললাম, বলুন তো আমার দেশ কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে আঙুল গিয়ে পড়ল দশটি অক্ষরে— গোবরডাঙ্গা। আমি চমকে উঠলাম। আমার দেশ কোথায় ওই দুই মহিলা জানেন না। কিন্তু প্ৰয়াত সাহিত্যিক জানতেন |
তারপর আরও প্রশ্ন। আরও উত্তর। নির্ভুল উত্তর। এই একটি ক্ষেত্র ছাড়া ভূতের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। ভূত সত্যি কি মিথ্যে তাও আমি জানি না। তবে ভূতের গল্প লিখতে মজা লাগে। আনন্দমেলা সম্পাদক কবি নীরেন চক্রবর্তী তুমি বডড ভয় দেখাও বাচ্চাদের। আমি প্ৰতিজ্ঞা করিছ। আর ভয় দেখাব না। ছােটরা জেনে রাখো, ভূত বলে কিছু নেই। ভূত শুধু মজা করার জন্য।
পৃথিবীর সব দেশেই ভৌতিক গল্প লেখা হয়। আমাদের দেশেও কত ভাল ভাল ভূতের গল্প লিখিয়ে আছেন। আমার গল্পে ভূত মিথ্যে হলেও গল্পগুলি সত্যি। যেমন চরিত্র ও বর্ণনাগুলি আমার দেখা পরিবেশ ও আমার চেনা। প্ল্যানচেট নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা তো আগেই বলেছি। এবার সেই প্ল্যানচেটকে নিয়ে এলুম সিং ভুমে ধাতকাঠিজিওওজিক্যাল সার্ভেরশিবিরে। সেখানে আমি একবার খবর করতে গিয়েছিলাম। খাট সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে আমার এক গভীর দুঃখ জড়িয়ে আছে। ইস্কুলের মাইনে দিতে না পারায় আমি যে খাটে শুতাম সেটি ইস্কুলের হেডমাস্টারকে বিক্রি করে মাইনে শোধ করতে হয়। তারপর থেকে স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে শুধু খাট।। ক্যামেরা গল্পের অনুপ্রেরণা স্বামী অভেদানন্দের পরলোক চর্চার বই থেকে। রাত্রির যাত্রী তো আমি নিজেই ছিলাম। থিয়েটার করে রাত দুপুরে একা একা বাড়ি ফেরার গা ছমছমে অভিজ্ঞতা আমি কি সহজে ভুলব।
হাজারির বউ-এর হাজারি আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশেই থাকত। হাজারির কোলে আমি মানুষ হয়েছি। গুরুদাসী ও আমায় খুব ভালবাসত। তাদের কথা আমার চিরদিন মনে থাকবে। আমার ভূতধরা নিছক মজার গল্প। ১৯৮২ সালে আমি পাকিস্তানে যাই ও পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট জিয়ায়ুল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তারপরই লিখি গুপ্তধনের সন্ধানে। সিউড়ির প্রাক্তন এস. পি ভাণ্ডারি সাহেব আমার খুব বন্ধু ছিলেন। তার সঙ্গে কত ঘুরেছি। শকুনের পালকে তাই বীরভূম এসে গেছে। বাদুড় পুরো বানানো গল্প। সর্পিলও তাই তবে ছোটবেলা থেকে আমার ভীষণ সাপের ভয়। দেওঘরে ইলেকট্রিকইন বাড়িতে আমিও কিছুদিন ছিলাম। ভারতীয় শিশুদের বিদেশে দত্তক দেওয়া নিয়ে একদা আমি প্রচুর খবর করেছি। শুধু ছায়ায় সেই দত্তক নেওয়া এক শিশুর কাহিনী আছে। মাদুলি-কবচেআমি বিশ্বাস করি না। তোমাদেরও করতে বলি না। কিন্তু অনেকের মধ্যে মাদুলি কবচে বিশ্ব আছে। আমি তাদের একজনকে নিয়ে লিখেছি একটি কবচোর কাহিনী। প্ৰয়াত শিল্পী ছবি বিশ্বাসের মোটর দুর্ঘটনা থেকে ঘাতক গল্পের প্রেরণা পাই। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ কভার করার জন্য জিপে করে খুলনা যাই। ফেরার পথে জিপটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া এক বাঙালি মেজর কলকাতায় তার বাড়িতে খবর দিতে বলেছিলেন। আমি কলকাতায় পৌঁছে তার স্ত্রীকে নিজে গিয়ে খবরটা দিই৷ এই ঘটনা নিয়ে চাবি গল্পটি। ভূতের বাগান গল্পটি আমার বোনের শ্বশুরের বাগান নিয়ে। তার শ্বশুরমশাই এর জীবদ্দশাতেই বাগানটি হাতছাড়া হয়ে যায়। ছেলেরা খেলার মাঠ করে। তাঁর খুব কষ্ট ছিল এজন্য।
দিল্লির ম্যাজিসিয়ান করুণাশঙ্করকে আমি খুব ভাল চিনতাম। তাঁর সঙ্গে কত আড্ডা দিয়েছি। উনি আমাকে একটি হরিণের চোখ উপহার দেন। তারপর গল্প মাথায় এসে গেল। সাইকেল গল্পটির সঙ্গে আমার ছােটবেলার এক খারাপ স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমার বাবাই এই গল্পের নায়ক। অভাবের জ্বালায় আমার এক নিকট আত্মীয়ের হয়। ছােটবেলার সেই স্মৃতি এখনও আমাকে তাড়া করে। সাইকেল গল্পটি তাই লিখে ফেলি। জাতিস্মর গল্পে আমার ছােটবেলাকার বন্ধুর ছায়া আছে। সে যখন আই এ ক্লাসে পড়ে তখন দূরারোগ্য ব্যধিতে মারা যায়। এক সময় জন্মান্তরবাদের উপর গবেষক প্যারাসাইকোলজিস্ট হেমেন গাঙ্গুলির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। হেমেনবাবু আমায় জাতিস্মরের গল্প শোনাতেন। তখনই আমার গল্পের প্লট মাথায় আসে। ইগলের নখ কলকাতায় এক অর্থ অপরাধীর আত্মহত্যা নিয়ে লেখা। কেউ কেউ বলে পুলিশই তাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল। সেই বাড়ি একদম বানানো গল্প। শুধু আমার পাশের গ্রাম গৈপুরের পটভূমি ছাড়া। আমাদের গ্রামের বিরাট জমিদার বাড়ি ভেঙে ফেলায় আমি খুব মর্মাহত হই। ওই বাড়িতে গুপ্তধন আছে এমন ধারণা ছিল। আমাদের গ্রামের পৈত্রিক বাড়ি দেওয়ানজি বাড়ি খুঁড়তে গিয়ে এক মজুর প্রচুর মোহর পায়। লোকটি সেই এক হাড়ি মোহর নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এইসব ঘটনা মিলে চােরাকুঠির রহস্য লেখা।
দ্বাদশ ব্যক্তি কাল্পনিক গল্প। শেষরাতের সারথি আমার ডাক বাংলোয় এক একগ বাসের অভিজ্ঞতার ওপর লেখা। সত্যি বড় ডাকবাংলোয় রাতে একা থাকতে গায়ে ছমছম করে।
সবশেষ গল্প গুপ্তধনের সন্ধানে লাহোরের পটভূমিতে লেখা। পাকিস্তানে সাতদিন ছিলাম। বহু বিচিত্র মানুষের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়। তাদের নিয়েই নানা গল্পের প্লট মাথায় আসে। যদিও এই গল্পটি নিজক ভূতের গল্প নয়।
আসলে ভূত থাকে আমাদের মত ভূতের গল্প লিখিয়েদের মাথায়। আমার গল্পগুলি পড়ে যদি তাদের সত্যি ভূত বলে মনে হয় তাহলে বুঝব আমার লেখা সার্থক। কারণ গল্পকে সত্যি বানানোই লেখকের কাজ। এইসব গল্পই ছোট ছোট বই এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সব ভূতকে এক জায়গায় করে সম্ভব হল দে’জ পাবলিশিং-এর সুধাংশুশেখর দে-র উৎসাহে। ভূতদের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। - পার্থ চট্টোপাধ্যায়
ভূতের গল্পের বই, ভৌতিক অমনিবাস- পার্থ চট্টোপাধ্যায়
বড়দের মত ছোটদের লেখাতেও সিদ্ধহস্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা প্রচুর রহস্য ও হাসির গল্প আছে। তার বিখ্যাত বই ‘হতাশ হবেন না” ১ম খণ্ডটি স্কুল-কলেজের সব ছাত্রেরই পড়া উচিত। এই অভিমত সব পাঠকের।
গোবরডাঙ্গা খাটরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। গোবরডাঙ্গা হিন্দু কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে বিএ অনার্স পাস করে জীবিকার সন্ধানে চলে আসেন কলকাতায়। সেই সময় এম.এ. পড়তে পড়তেই যোগ দেন সাংবাদিকতায়। সাংবাদিক হিসাবে পার্থবাবুর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। বহুবার তিনি সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। পেয়েছেন নানা ফেলোশিপ, পুরস্কার, সম্মানীয় পদ। হাওড়া পণ্ডিত সমাজ তাকে সাহিত্য রত্ন উপাধি দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পান সর্বোচ্চ পিএইচডি ডিগ্রি। ৭৫ খানির উপর বইয়ের লেখক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছোটদের লেখায় সিদ্ধহস্ত। ভূতের গল্প লেখায় তিনি যে সেরা সাহিত্যিকদের একজন, ভৌতিক অমনিবাসের গল্পগুলিই সেটার প্রমান।
'ভৌতিক অমনিবাস- পার্থ চট্টোপাধ্যায়' এই বইটিতে মোট ৩০টি গল্প আছে।
বাংলা ভূতের গল্পের বই- 'ভৌতিক অমনিবাস- পার্থ চট্টোপাধ্যায়' পিডিএফ সংগ্রহ করুন
No comments:
Post a Comment