আকালের সন্ধানে - মৃণাল সেন পিডিএফ - বাংলা বই এর pdf ডাউনলোড-Bangla Digital Boi Pdf

Latest

Friday, May 12, 2023

আকালের সন্ধানে - মৃণাল সেন পিডিএফ


 আকালের সন্ধানে - মৃণাল সেন, বাংলা বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'আকালের সন্ধানে'
লেখক- মৃণাল সেন
বইয়ের ধরন- বাংলা বই
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৮৬
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ৩১এমবি
আপলোার- সৈকত সেনগুপ্ত
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত

আকালের সন্ধানে - মৃণাল সেন

আাত্মকথন
মৃণাল সেন
'আকালের সন্ধানে' ছবি তোলার ছবি। ছবি তুলতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন, নিজেকে, অপরকে। এতে রয়েছে ছবি তোলার নানা টুকিটাকি, উন্মাদনা, হুল্লোড়, নানা বিলি-ব্যবস্থা, এমনকি চড়ুইভাতির আমেজও এবং সব কিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত এক চরম বিপর্যয় এবং একটা শক্ত ঝাঁকুনি ।
'আকালের সন্ধানে' কখনো গল্প, কখনো তথ্য, কখনো বা গল্প ও তথ্য ডিঙিয়ে বাইরেকার কিছু কিছু টুকরো কথা । একটা বিশেষ সময়ে শুরু করে পুরোনো দিনে ফিরে যাওয়ার ছবি 'আকালের সন্ধানে', একবার নয়, বারবার এই ধরনের বর্তমান ও অতীতের মধ্যে আনাগোনা রয়েছে, কিন্তু চলতি কথায় ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক্’ যাকে বলা হয় তা এই ছবিতে নেই । এ-ছবি একমাত্রিক নয়, দ্বিমাত্রিক নয়, বহুমাত্ৰিক ৷
অর্থাৎ এ সবই যে এই ছবিতে আমরা করতে পেরেছি এমন কথা কখনো হলফ করে বলতে পারবো না, বলবো আমরা এসব করতে চেষ্টা করেছি ছবি তোলার নিয়ম মেনে, কখনো বা নিয়ম ভেঙে ৷
১৯৮০ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বাস্তবে ঠিক যেদিন আমরা দলবল নিয়ে কলকাতা ছাড়ি ঠিক সেইদিনই এক ছবি তোলার দল এক গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হয় ১৯৪৩ সালের সেই ভয়ংকর আকালের ছবি তুলতে। এবং এই নিয়েই আমাদের ছবি, খানিকটা লিখিত চিত্রনাট্য অনুসরণ করে আর বাকিটা যখন যেমন ঘটেছে তারই প্রতিচ্ছবি। এবং বর্তমান চিত্রনাট্যটি সেই লিখিত ও অলিখিত পড়ে পাওয়া ঘটনাপঞ্জীর সামগ্রিক দলিল । এবং অবশ্যই সাজানো । এবং পাঠকের জ্ঞাতার্থে এই সাজঘরকেই আমরা বলে থাকি সম্পাদনার টেবিল ৷
নানা স্তরে ওঠানামা করে ছবিটি একসময়ে এমন একটি জায়গায় এসে দাড়ায়, অথবা দাড় করাতে চেষ্টা করি, যখন একটা জরুরি প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে এতোদিন যে আমরা বড়ো গলায় চেঁচিয়ে এসেছি যে আমরা রিয়ালিস্ট, পারিপার্শ্বিক বাস্তবকেই আমরা তুলে ধরেছি আমাদের শিল্প মাধ্যম, সত্যিই কি আমরা তা করতে পেরেছি ? এবং পেরে থাকলে কতোটুকু ? অর্থাৎ শিল্পকর্মে কতোখানি, আমরা খাটি থাকতে পেরেছি এবং কোথায়, কোন মুহূর্তে, আমরা নিজেদের ঠকাতে শুরু করেছি অথবা গা-ঢাকা দিয়েছি তথাকথিত ‘শিল্পসৌকর্য’- এর আড়ালে ?
রবীন্দ্রনাথ একসময়ে বলেছিলেন, ধোপা কাপড় কাচে ব্যাপারটা বাস্তব, কিন্তু কথাটা শিল্পসমৃদ্ধ আদৌ নয়। তিনি বলেন, যদি বলা যায় যে ধোপা কাপড় কাচে, বিরহীর ধুতি কাচে, বিরহিণীর শাড়ি কাচে এবং একই গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে ধুতি ও শাড়ি চলতে চলতে বিরহী-বিরহিণীর বাড়ির দরজায় এসে ছাড়াছাড়ি হয়, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই বিশেষ শিল্প-গুণান্বিত হয়ে উঠতে
পারে।
বরাবরই ভেবেছি রবীন্দ্রনাথের কথাটা ভারি সত্যি, চমকদার, চটকদার, মনকে ও ভাবনাকে পুলকিত করে। কিন্তু আজ ভাবি, কথাটা যতোখানি চমক সৃষ্টিকারী, ততোখানি বস্তু-নিষ্ঠ হয়তো নয়। রজক-জীবনের বিয়ালিটি কি বিরহী-বিরহিণীর ধুতি-শাড়ি বওয়াতেই সীমাবদ্ধ বা ঐ ঘটনাটাই তার জীবনের বড়ো ঘটনা ? আজ ভাবি, রবীন্দ্রনাথ হয়তো সেদিন কথার পর কথা সাজিয়ে নিজেরই অজান্তে রজককে চিনির বলদ সাজিয়ে তাঁরই মানস-জগতের বাসিন্দা বিরহী-বিরহিণীর কথাই বলেছেন, রজকের কথা নয়। এবং এই প্রসঙ্গে এই মুহূর্তে ইতালির নিও-রিয়ালিজম্-এর প্রবক্তা জাভাত্তিনি-র এক বিশিষ্ট উক্তি স্মর্তব্য। তিনি বলেছিলেন, নিও-রিয়ালিজম্-এর প্রাথমিক ও সার্বিক উদ্দেশ্য to make things spectacular by their natural qualities, not by their exceptional qualities. জাভাত্তিনির সেই ঐতিহাসিক বক্তব্যকে আত্মস্থ করে আজ তাই বলতে ইচ্ছে করে, বিরহী-বিরহিণীর ধুতি- শাড়ির বণ্টন ধোপার exceptional quality, natural অথবা প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা নয় ।
কথাগুলো পাঠকের কাছে কটু শোনাতে পারে, ধৃষ্টতার পরিচায়ক মনে হতে পারে, কিন্তু বহু পথ অতিক্রম করে বহুঘাটের জল খেয়ে ও নানাভাবে ঠেকে ও ঠকে আজ আমি, আমরা, এই সত্যেরই মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি এবং জোর গলায় বলছি : রিয়ালিটির শারীরিকতা ও শিল্পীর redemption of reality-র মধ্যে .. কোথায় কখন, হয়তো জ্ঞানত, হয়তোবা শিল্পীরই অজান্তে, একটা শূন্যতা বা ফাঁক দেখা দেয় ৷ এবং শিল্পী তখন তাঁর শিল্প-চাতুর্যে (!) সেই শূন্যতা বা ফাঁককে ঢাকার চেষ্টা করেন নানাভাবে এবং সেই ভাব বা ভঙ্গিকেই আমরা বলে থাকি শিল্প-সৌকর্য। কথাশিল্পী তা করে থাকেন কথা খেলিয়ে, অঙ্কন-শিল্পী করেন রং ও তুলি বুলিয়ে আর ছবি-করিয়েরা করেন ক্যামেরার ব্যবহারে, শব্দের ব্যঞ্জনায়, ছবি ও শব্দের মিলনে ও বিরোধে। এবং অধিকাংশ সময়েই ভাবাবেগের উৎকট আতিশয্যে ৷ অর্থাৎ তথাকথিত শিল্পসুষমায় শূন্যতাকে আড়াল করে রাখেন ।
আত্মকথনের ভঙ্গিতে আমরা ‘আকালের সন্ধানে' ছবিতে এই প্রশ্নই নানা স্তর ডিঙিয়ে বলতে চেষ্টা করেছি, নিজেদের অক্ষমতার কথা বলেছি, বলেছি এক মস্ত শিল্প-সংকটের কথা ।
আসল কথা, আমরা সবাই রিয়ালিটির সরাসরি মুখোমুখি হতে কিঞ্চিতধিক ইতস্তত করি, হয়তো বা কখনো বেসামাল হয়ে পড়ি ।
‘আকালের সন্ধানে’-এর নায়ক, একজন শিক্ষিত চিত্র পরিচালক, ১৯৪৩-এর পুরো ইতিহাস বয়ে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল ১৯৮০ সালের এক দারিদ্র্য-লাঞ্ছিত পল্লীগ্রামে। ইতিহাসের বোধের সঙ্গে শিল্প-বোধের সমন্বয়ও হয়তো ঘটিয়েছিল। কিন্তু অতীত যখন বর্তমানে ঢুকে পড়ে চোরের মতো, কোনোরকম জানানি না দিয়ে, তখনই নায়ক বিচলিত হয় । এবং শেষ পর্যন্ত ‘রিয়ালিটি” থেকে মুখ ফিরিয়ে পালিয়ে যায় ।
অমলেন্দু চক্রবর্তীর যে-পাণ্ডুলিপিকে ভিত্তি করে আমাদের এই চিত্রনাট্য ও পরবর্তীকালে ছবি গড়ে উঠেছে, সেই পাণ্ডুলিপিরও শেষ কথা ১৯৮০ সালের অভাগিনী দুর্গার এক বুক-কাঁপানো উক্তি : “কোথায় পালিয়ে গেলেন বাবুরা ? আপনারা না আকালের ছবি তুলতে এসেছিলেন ?”
এ এক অর্বাচীনের অকথ্য কথন, না এক পোড় খাওয়া মানুষের সত্যভাষণ তা পাঠক বিচার করবেন ।

এই বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা একটি সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য 'আকালের সন্ধানে - মৃণাল সেন' -এর বাংলা পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন

No comments:

Post a Comment