উপনিষদের দর্শন - হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় পিডিএফ - বাংলা বই এর pdf ডাউনলোড-Bangla Digital Boi Pdf

Latest

Friday, March 11, 2022

উপনিষদের দর্শন - হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় পিডিএফ


উপনিষদের দর্শন - হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা দর্শন বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'উপনিষদের দর্শন'
লেখক- হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের ধরন- গবেষণামুলক দর্শন বই
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ১৯১
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ১৩এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত

উপনিষদের দর্শন - হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়

উপনিষদ প্রাচীনকালের মনীষীর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। তা নানাভাবে বিস্ময় উৎপাদন করে। তা বেদের ন্যায় ধর্মগ্রন্থের আশ্রয়ে জন্মলাভ করেও স্বাধীন মননশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তা মানুষের প্রথম দার্শনিক চিন্তনের নিদর্শন। সবার বড় বিস্ময়, তার বক্ষ আশ্রয় করে এমন একখানি বিজ্ঞানসম্মত, যুক্তিসঙ্গত, আশাবাদী দর্শন গড়ে উঠেছিল যা যুগ যুগ ধরে বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছে।
সে-দর্শন বলিষ্ঠ যুক্তি দিয়ে গড়া, সে-দর্শন এমন এক বিশিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে উন্নীত হয়েছিল যেখানে শোক, তাপ, মোহ, মত্যুর পরুষ হস্তাবলেপ পৌঁছায় না। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে যারা দীক্ষিত হয়েছিল তারা হৃদয়ঙ্গম করেছিল যে মানুষ অমৃতের পুত্র হবার অধিকারী, কারণ তারা নিজেরা পরাবিদ্যার চর্চা ক'রে মত্যুর বেদনাকে খণ্ডন করতে পেরেছিল। সেই কারণেই উপনিষদের বাণী আনন্দমুখর হয়ে উঠেছিল।
তা ঘোষণা করেছিল, “এই পথিবী সকল জীবের নিকট মধুসরূপ। এই পৃথিবীতে সকল জীব মধু।”
তা বলেছিল, “বাতাসে মধু, বয়, নদীর জলে মধু ক্ষরে। ওষধীরা মধুময় হক। দিবা এবং উষা মধুময় হক। পথিবীর ধুলি মধু। আমাদের পিতা আকাশ মধুময় হক। বনস্পতি, সূর্য এবং গাভীগুলি সকলেই আমাদের নিকট মধুময় হক।"
তা সমগ্র বিশ্ব ব্যেপে এক আনন্দময়ের প্রকাশ উপলব্ধি করেছিল। তাই পরম সত্তাকে তা বর্ণনা করেছিল “আনন্দরূপ ও অমৃত” বলে।
এমন আনন্দরসে পরিপ্লাবিত সাহিত্য বড় একটা দেখা যায় না। তা অত্যন্ত বিরল। তবে তার আর একটি উদাহরণ আমাদের দেশেই পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের রচনার মধ্যে। তিনিও এমন দিব্যদৃষ্টির সন্ধান পেয়েছিলেন যার ফলে তাঁর নিকট মানবজীবন “আনন্দ যজ্ঞে নিমন্ত্রণ” রূপে প্রতিভাত হয়েছিল। তিনিও অনুরূপ সুরে গেয়েছিলেন,
“সকল আকাশ সকল ধরা
আনন্দ হাসিতে ভরা,
যেদিক পানে নয়ন মেলি।
ভালো সবি ভালো।”
তাই দেখি উপনিষদের এই বাণী বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মনীষীর শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছে। এশিয়াটিক সোসাইটির স্থাপয়িতা স্যর উইলিয়ম জোনসই প্রথম সংস্কৃত সাহিত্যের অমূল্য ভাণ্ডারের সহিত পশ্চিমের মানুষের সংযোগ স্থাপন করেছিলেন। তিনি উপনিষদ পড়ে এমন মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তাঁর উচ্ছসিত প্রশংসা করে গিয়েছেন। পরবর্তীকালে বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক শোপেনহর উপনিষদ পাঠ ক'রে অনুরুপ ভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি উপনিষদের জন্য যে শ্রদ্ধাঞ্জলি রচনা করে গেছেন তেমনটি মনে হয় খুব কম গ্রন্থের ভাগ্যেই জোটে। তার বাংলা অনুবাদটি এই রকম দাঁড়ায় :
“সমগ্র বিশ্বে এমন কোনো গ্রন্থ নাই যা উপনিষদের মত কল্যাণকর ও উৎকর্ষ সাধক। তা আমাকে জীবনে দিয়েছিল তৃপ্তি মরণেও এনে দেবে তৃপ্তি।”
এই প্রশংসাপত্রের অনুমোদনের যদি প্রয়োজন হয় তাও পাওয়া যাবে বিশ্ববরেণ্য আর একটি মনীষী দার্শনিকের কাছ হতে। তিনি হলেন ম্যাকসমুলার। তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এই প্রশংসাপত্রের অনুমোদন লিখে রেখে গেছেন। তাঁর নিজের রচিত এক গ্রন্থে শোপেনহরের উক্ত রচনাটি উদ্ধৃত করে তারপর এইরকম মন্তব্য করেছেন,
“শোপেনহরের এই কথাগুলির যদি সমর্থন লাগে তা হলে বহু দর্শনগ্রন্থ এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠে নিবেদিত আমার সুদীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তা দিতে আমি নিজেই প্রস্তুত আছি।”
উপনিষদের অন্যতম বিস্ময় হল মানুষের দার্শনিক চিন্তনের প্রথম চেষ্টায় আমাদেরই দেশের মনীষী এমন বিশ্বজয়ী উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছিলেন।

দার্শনিকের আলোচনার বিষয় কিন্তু যেমন অসীম তেমন জটিল। বিশ্ব-সম্বন্ধে যা কিছু মৌলিক প্রশ্ন উঠতে পারে সবই তাঁর আলোচনার বিষয়। কাজেই সেখানে পরীক্ষামূলক গবেষণার সুযোগ নেই। তাই দার্শনিককে অধিকমাত্রায় কেবল যুক্তি ও চিন্তার ওপর নির্ভর করতে হয়। এইভাবে চিন্তা করে তিনি আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে তথ্যগুলি সাজিয়ে গুছিয়ে, যুক্তি দিয়ে সমর্থন করে প্রকাশ করেন।
উপনিষদের দর্শন কিন্তু এইভাবে রচিত হয় নি। তার কারণ উপনিষদের ঋষি খানিকটা কবি, খানিকটা দার্শনিক। তিনি বিভিন্ন সমস্যাকে পৃথক করে নিয়ে কেবল বিচার-মার্গের সাহায্যে তার সমাধানে তথ্যগুলিকে সাজান নি। বিশ্বের নানা সমস্যা সম্বন্ধে তিনি চিন্তা করেছেন, ভেবেছেন, তার পর যা উপলব্ধি করেছেন, তা অনেক সময় কবিসুলভ ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন। ফলে বিভিন্ন বাণীর মধ্যে কোনো সংযোগ নেই, বিভিন্ন বস্তুর পৃথক আলোচনাও নেই। বিভিন্ন কালে, বিভিন্ন মনীষী যা উপলব্ধি করেছেন, উপনিষদের পাতায় তা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত আকারে ছড়িয়ে আছে। সুতরাং উপনিষদের দর্শনকে এক জায়গায় সাজান অবস্থায় কোথাও পাই না। তাকে পেতে হলে আমাদেরই গড়ে নিতে হবে। এই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত দর্শন তত্ত্বের কণাগুলি যেন একটি ছিন্ন হারের ছড়ান মুক্তা। তাদের খুজে খুজে সংগ্রহ করে নিতে হবে। তারপর সততা দিয়ে গ্রথিত করতে হবে। তবেই সমগ্র হারখানি পাওয়া যাবে। উপনিষদের বিচ্ছিন্ন ভাবধারাগুলিকে যুক্তিসম্মতভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে তবেই আমরা তার সমগ্র রূপখানি পেতে পারি।

এই বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখা 'উপনিষদের দর্শন' বইটির পিডিএফ সংগ্রহ করুন।

No comments:

Post a Comment