পথের কবি - কিশলয় ঠাকুর, বাংলা বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'পথের কবি'
লেখক- কিশলয় ঠাকুর
বইয়ের ধরন- জীবনীমুলক বই
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৩১৮
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ২৫এমবি
প্রিন্ট খুব ভালো, জলছাপ মুক্ত
ভূমিকা? যদি হয়, তবে এটা একটা অদ্ভুত ভূমিকা। এমন ভূমিকা, যার ভুমিই নেই। না থাক, তব দৃশ্য আছে, রৌদ্র, রূপ, গন্ধ, রস—সব আছে। বইয়ের নাম “পথের কবি”। কবির নাম বিভূতিভূষণ।
“পথের কবি”—এই কথাটা শব্দ দিয়ে কাছাকাছিই যিনি গাঁথেন (যিনি কবি তিনিই তো সাথী, এই অর্থে), সেই রবীন্দ্রনাথ নিজেকে কিন্তু এই নামটা কখনও দেননি। বরং তাঁকে বারংবার নমস্কার জানিয়েছেন। আজ হঠাৎ মনে হল, সেই কবি বিভূতিভূষণও তো হতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ কোনও স্রষ্টাকে নিশ্চয় প্রণতি জানিয়েছেন, তবু যিনি আসেননি, অথচ ধ্রুব আসবেন, তাঁর প্রতি তাঁর নমস্কার কখন যেন তাঁরই অজানিতে সবে যিনি এলেন, তাঁরই প্রতি নিবেদিত হয়ে গেছে।
না হয়ে উপায় ছিল না। মহৎ মহৎকেই চিহ্ন দেখে চিনে নেয়। অতএব তাঁর জীবনের ক্লান্ত ঘণ্টায় যে পাঁচালীকার এলেন, তাঁকে স্বাগত না জানিয়ে পিতৃপ্রতিম কবির উপায় ছিল না। কারণ নিজে সমস্ত জীবন ধরে ভাঙা পথের রাঙা ধুলো যে অবিরত উড়িয়েছেন! স্থিত থেকেও অস্থিত। শুধু গান "নিশীথে কী কয়ে গেল মনে”? কে কাকে কী বলে যায়? "বলে মোরে, চলো দুরে”।
এই চলো-চলো-চলো চলো যাই সত্যের ছন্দে, কিংবা চরৈবেতি মন্ত্রটি তাঁর নিজের জীবনে যেমন, বিভূতিভূষণের রচনা এবং পথ-পরিক্রমার মধ্যে অবশ্যই আভাসিত হয়েছে তিনি দেখে থাকবেন। আজ এই কথা স্পষ্ট করে বলার সময় এসেছে যে, রবীন্দ্রনাথের সগোত্র, তাঁরই ধারার অনুসারী আর একটি লেখকের কথা যদি লিখিত হয়, তবে একমাত্র নামটি বিভুতিভষণ।
কোথায় যেন মিল! এই প্রাত্যহিকতার ধূলিমলিন জীবনের বাইরে, অনেক উপরে শিল্পকে স্থাপন করার কীর্তি (কয়েকজন কবিকে বাদ দিলে) খালি বিভূতিবাবুর। এখানে তিনি তাঁর পূর্বসূরীর সঙ্গী, এখানে রবীন্দ্রনাথ আর বিভূতিভূষণ পাশাপাশি।
হয়তো পরবতী বলেই গল্পগুচ্ছের, ছিন্নপত্রের আর চৈতালির কবি যতদূর গিয়েছিলেন, বিভূতিভূষণ তার চেয়েও অনেক দূর এগিয়ে গেলেন। শিলাইদহ, পতিসর, সাজাদপুর এবং যশোর চব্বিশ পরগনা নদীয়ার মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব সামান্যই। ভূপ্রকৃতিও এক। আর মানুষ? তাদের কষ্ট, তাদের দারিদ্র্য, এক-এক—এক। সেই মানুষদেরও হাজির করেছেন বিভূতিভূষণ। অনাহার চিরকালের শিল্পের আহার বা আহরণ হয়ে গেছে। প্রেম, অপ্রেম, সবই। দুজনেই যা সুন্দর, যা শোভমান, তাকে খুব উপরে, সব ছাপিয়ে জায়গা দিতেন। সেই জন্য দুঃখের একটা মেঘে-ছাওয়া আকাশ চোখে পড়ে। তবে তার বিকৃত বীভৎস আকার তেমন আবির্ভূত হয় না। অথচ তাদের বোঝা যায়, ছোঁয়া যায়। কিন্তু উত্তরণ? সেটা পূর্বেসরীর মতো উত্তরসুরী বিভূতিভূষণেরও নিজস্ব।
কিন্তু ওই যে বলেছিলাম না, তিনি এগিয়ে গেছেন ? যেভাবে একটা মশাল থেকে আর একটা মশাল জালিয়ে কেউ অগ্রসর হয়—এ সেই অগ্রগামিতা। উৎসের স্রোতকে সমতলের ধারাতে শুধু অব্যাহত রাখা নয়, যেন আরও বিস্তীর্ণ, আরও উদার করে দেওয়া।
বিভূতিভূষণ নইলে আমরা কালকাসুন্দি, ঘেঁটু, পুঁই, মুথাঘাস, কাশ, শরবন, শালুক, শ্যাওলা, ডুমুর, চালতা, গোলঞ্চ, হেলেঞ্চা, কলমি প্রভৃতির সবুজে যে এত রং, এত মনোরম সুবাস, তা কোনও দিন জানতে পেতাম কি? মহাকবি তো “নাম-না-জানা তৃণকুসুম” বলেই ক্ষান্তি দেন। তাদের নামে নামে চিহ্নিত করলেন বিভূতিবাবু। রঙ আর গন্ধকে শব্দে শব্দে, বর্ণে বর্ণে চোখের সমখে উপস্থিত করলেন। সেই শব্দ রূপবান হল। তারা অকাতর বাসও বিলোতে থাকল। শব্দেরও যে ঘ্রাণ আছে, আমরা জানলাম, পেলাম, বুক ভরে নিলাম।
আর অরণ্য? বিভূতিভূষণের অরণ্য কোনও শৌখিন সাফারির আলতো ভালো লাগা নয়। এই নীল অরণ্য দুর হতে শিহরে না। একেবারে কাছে আসে, তার পত্রপ্রচ্ছায়, তার ভয়ংকর সত্তা দিয়ে আমাদের আবৃত করে, আমাদের মধ্যে মিশে যায়। তাঁর বন বড়ো ঘন, বড়ো ভীষণ এবং বড়োই সত্য।
বাউলের স্বভাব তাঁর। পথের কবি হিসেবে তিনি শুধু দেখেছেন। না, ভুল হল। মাখামাখি হয়ে গেছেন। জগতে যত প্রাণ উদ্ভিজ্জ এবং স্থাণু যত প্রাণ সঞ্চরণশীল এবং সরব, তাদের সমবেত সঙ্গীত শুনিয়েছেন তিনি। অস্থির অথচ সরল, স্থিত কিন্তু সন্ধানী, এমন কোনও শিল্পীর নিদর্শন বঙ্গসাহিত্যে যদি থাকে, তবে তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে, অন্তত আমাদের কাছে হেমিংওয়ে তুলনীয় তো বটেনই, উপরন্তু বিদেশী ওই মহৎ লেখকও যেন বিভূতিভূষণের কাছে ঈষৎ সুদুর ধুসর হয়ে যান।
নিসর্গের সঙ্গে সৃষ্টির যা অন্যতম প্রধান উপাদান, সেই নারীকেও তিনি অবহেলা করেননি। সন্ধান শুধু সন্ধান। প্রাপ্তি আর বঞ্চনার ফিরিস্তি দিতে গেলে তাঁর সত্তাকে ছোট করা হবে। তবু জিজ্ঞাসা থাকে। বিশেষ বিশেষ রমণী-কমনী, কে, কে, আর কে? তাঁদের প্রভা যেন সব ঢেকে দেয়, কেউ কেউ রেণু হয়ে ঝিকমিক করে। অবশেষে একটি কল্যাণীহস্ত সব-কিছুর আধার আর আবরণ হয়।
এই গ্রন্থে সমস্তই আছে। উদার প্রান্তর, গহন বন আর তুচ্ছাতিতুচ্ছ শস্য-পুষ্পকুসুমাদি। আর তাঁর জীবনের সমুদয় অন্মেষণাও। নারী, প্রকৃতি। রূপ-রসের সঙ্গে সঙ্গে গন্ধ আর মোহ মিলিয়ে এক-একজন শিল্পী যেভাবে সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেন, তারই কাহিনী। অকালে প্রয়াত হয়েও তিনি সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন বলেই তো আমাদের আজও পূর্ণ করে দিচ্ছেন। সারা জীবন তিল তিল অক্লান্ত আহরণ করে যিনি তিলোত্তম, “পথের কবি” তারই পরিশ্রমী আলেখ্য। একটি শিল্পীর জন-জীবন আর মনোজীবনের এমন মরমী পরিচয় খুব বেশি জীবন-বৃত্তান্তে পাইনি। লেখককে আমার ঈর্ষা, লেখককে আমার অভিনন্দন। - সন্তোষকুমার ঘোষ
পাঠকদের নিকট 'বিভূতিভূষণ' একটি জনপ্রিয় নাম! তাঁর সৃষ্ট 'পথের পাঁচালী' পড়ে নি, এমন পাঠক কি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু একজন মানুষকে শুধু চিনলেই কি তাকে পরিপূর্ণভাবে জানা হয়? এই অনন্য স্রোষ্টার জীবনকাহিনীমুলক বইটির পিডিএফ সংগ্রহ করি।
এই বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা জীবনকাহিনীমুলক বই 'পথের কবি - কিশলয় ঠাকুর' -এর বাংলা পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন
No comments:
Post a Comment