জলসাঘর- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা গল্প সংগ্রহ বই
ডিজিটাল বইয়ের নাম- জলসাঘর
লেখক- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের ধরন- গল্প সংগ্রহ
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে-১৯৬
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ১১এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত
তারাশঙ্করের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ছিল অফুরান। সেই অফুরান ভাণ্ডার নিয়ে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন সাহিত্যে। একজন কথাসাহিত্যিকের পক্ষে এমন অভিজ্ঞতা থাকা কেবল দরকারীই নয়, অনিবার্যও বটে। এর ফলে তাঁর গল্প-উপন্যাস এত বৈচিত্র্যে ভরা। জমিদার, উচ্চবর্ণের মানুষ থেকে শুরু করে নীচুতলার কাহার, বাউরি, বান্দী, ডোম, এমনকি চোর, গুণ্ডা, খুনী প্রভৃতি অবলীলায় তার গল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। জমিদারের প্রাসাদ থেকে দরিদ্রতমের কুড়েঘর—কোন কিছুই তার দৃষ্টি এড়ায় না। তারাশঙ্করের গল্প পড়ে মনে হয় এ যেন একেবারে আকাঁড়া অভিজ্ঞতার প্রতিলিপি সব।
“বায়বাড়ি" ও "জলসাঘর” একটি দোর্দণ্ডপ্রতাপ জমিদার-বংশের গড়া ও ভাঙার গল্প, 'বায়বাড়ি' লিখলাম—লিখলাম জলসাঘর গড়ে ওঠার গল্প । জলসাঘরের ভাঙনের কথা মনে রেখেই লিখলাম “রায়বাড়ি"। [ তারাশঙ্কর কৃতিকথা, প্রথম খণ্ড, আমার সাহিত্য-জীবন ( প্রথম ভাগ), পৃ ৪১৫ ] কিন্তু গড়া ও ভাঙার মধ্যবর্তী অংশ “জলসাঘর” গ্রন্থে নেই। তাই মনে হয়, গল্প দুটি একটি বড় কাহিনীর প্রথম ও শেষ অংশ, যার মধ্যবর্তী অংশ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। তবু এই গ্রন্থেই দুটি অংশের মধ্যে একটা যোগসূত্র রাখতে চেষ্টা করেছেন লেখক-
“তিন পুরুষ ধরিয়া রায়ের করিয়াছিলেন সঞ্চয়। চতুর্থ পুরুষ করিয়া ছিলেন রাজত্ব। পঞ্চম ও ষষ্ঠ পুরুষ করিলেন ভোগ ও ঋণ। সপ্তম পুরুষ
বিশ্বম্ভরের আমলেই রায়বাড়ির লক্ষ্মী সে ঋণসমুদ্রে তলাইয়া গেলেন।” ( জলসাঘর, পৃ ২৪)।
“রায়বাড়ি” গল্পে রাবণেশ্বরের প্রতাপ ও বিক্রমের ছবি তুলে ধরা হয়েছে, “গিন্নী, মাটি বাপের নয়, মাটি দাপের।” রাবণেশ্বরের এই উক্তির মধ্যে নিহিত আছে তিনি কি ভাবে প্রজা শাসন করেন, নিজের প্রতিপত্তি অটুট রাখেন। কিন্তু সেকালের জমিদার কেবল শাসকই ছিলেন না, “জমিদার তখনও ভূস্বামী, এবং তাহাদের সে স্বামিত্বের সত্যকার অর্থ তাহারা বজায় রাখিয়াছিলেন।” (ঐ, পৃ ১}। তাই যিনি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না, তিনি বন্যার সময় প্রজাদের জন্য দ্বার খুলে দেন। এগিয়ে আসেন গাঙ্গুলির মেয়ের বিয়ের আয়োজন করতে। সেদিক থেকে রাবণেশ্বর রায় দয়ালু স্বৈরতন্ত্রীর মত একদিকে নিষ্ঠুর, নির্মম ; অন্যদিকে দয়ার সাগর। তবু লেখক রাবণেশ্বর বসুকে যতই মহিমান্বিত ভাবে আঁকতে চেষ্টা করুন না কেন তার আচরণ সেই মহিমময় রূপ কখনো কখনো বেশ চাপা পড়ে যায়। কালি বাগ্দীর সাহায্যে প্রজাদের সুপ্তি ও অসহায়তার সুয়োগ নিয়ে গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায়। রাবণেশ্বরের কাপুৰুষতা প্রকাশ না পেলেও বীরত্ব প্রকাশ পায় না, একজন নিছক ষড়যন্ত্রকারীর মত মনে হয় তাকে, যিনি প্রকাশ্যে কাজ করতে ভরসা পান না। আবার সমস্ত সম্পত্তি দেবত্রে অর্পণ করে সংসার ত্যাগের সংকল্পে তিনি অটুট থাকতে পারেন না, ফিরে আসেন। এই ফিরে আসা তার ব্যক্তিত্ব-উখিত হলে নিশ্চয় তা যথোপযুক্ত হতো সন্দেহ নেই, কিন্তু "রায় আবার জলসাঘরের দিকে চাহিলেন। দেওয়ালে বিলম্বিত তাহার পূর্বপুরুষগণের প্রতিকৃতি গুলি সজল বাতাসে মৃদুমৃদু দুলিতেছিল। এ কি, ভুবনেশ্বর রায়, ত্রিপুরেশ্বর রায় কি তাহাকে ডাকিতেছেন?” (ঐ পৃ ১৮)। এখানে রাবণেশ্বরের তেজস্বিতা ও অমিত বিক্রম ও তাকে সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে দেয় না, পূর্বপুরুষের স্মৃতি ও আহ্বান তার সমস্ত
শৌর্যবীর্য হরণ করে নেয়, যেন তিনি তাদের আহ্বানের ক্রীড়নকমাত্র । ফলে রাবণেশ্বর চরিত্র লেখকের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার আদিস্থানে অটল থাকে না। বরং খুব অল্প আয়োজনে রায়-গিন্নীর চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। প্রজাদের প্রাণরক্ষার জন্য তার দৃঢ় প্রতিবাদ, আবার “লোকের দীর্ঘশ্বাসকে তুমি ভয় কর না? আমার ওই একটি সন্তান—” উক্তির মধ্যে মায়ের ভীরু আশঙ্কার প্রকাশ তাকে রাবণেশ্বরের বিরাটত্বের পাশে অনেক বেশী মানবিক করে তোলে। রাবণেশ্বর অতি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন ফেরার সময়, আয় “জলসাঘর” এর গল্পটি এক নিঃশেষিত জমিদারের স্মৃতিভারে পড়ে থাকার কাহিনী। গৌরব লুপ্ত, তবু তার ছটা মোহ বিস্তার করে আছে। ফলে সমস্ত গল্পটি একটা দীর্ঘশ্বাসের মত মনে হয়, “বিশ্বম্ভর লক্ষ্মীহীন দেবরাজের মত শুধু বসিয়া বসিয়া দেখিলেন।” (ঐ, পৃ ২৪)। বিশ্বম্ভরের কোনও উদ্যম নেই, কারণ ঋণ-সমুদ্র থেকে ভেসে ওঠার শেষ চেষ্টাটুকুতে বাদ সেধেছে হালে বড়লোক মহিম গাঙ্গুলি।
“বসন্ত সমারোহ করিয়া রায়বাড়িতে আসে না। তাহার পাপ্য-অর্ঘ্য দিবার মত শক্তি ও বায়বংশের নাই। মালার অভাবে ফুলের বাগান শুকাইয়া গিয়াছে। আছে মাত্র কয়টা বড়গাছ মুচকুন্দ, বকুল, নাগেশ্বর, চাঁপা। সেগুলিও এই বংশেরই মত শাখা-প্রশাখাহীন, এই প্রকাণ্ড ফাটল-ধরা প্রাসাদখানার মতই জীর্ণ।” (ঐ, পৃ ১৯ }। এ বর্ণনা শুধু বায়বাড়ির বাইরের বর্ণনাই নয়, এ বিশ্বম্ভর রায়েব মানসিক অবস্থারও প্রতিচ্ছবি। বিশ্বম্ভর দর্শক চরিত্র হওয়ার ফলে সে কেবল অবস্থার দাসে পরিণত হয়েছে, উদ্যমের মধ্যে আপন পৌরুষকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি। বোধহয় তা সম্ভবও ছিল না, কেননা নবীন ব্যবসায়ীদের সঙ্গ দ্বন্দ্বে তখন জমিদারতন্ত্রের হারবার পালা শুরু হয়েছে। আর ইতিহাস ও তাই বলে। তারাশঙ্কর বিলক্ষণ জানতেন, জমিদারতন্ত্র ক্ষয়িষ্ণু সেই তন্ত্র নতুন দ্বন্দ্বে পরাস্ত হবে। তবু এই সত্যটি জানার পরও লেখক অন্তর দিয়ে তা মেনে নিতে পারেন নি, তাই গল্পের শেষদিকে মহিমের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই তিনি তুলে ধরবেন বিশ্বম্ভরের বিলাস-বিহ্বল স্মৃতি, প্রদীপ নিবে যাওয়ার আগে জ্বলে ওঠার ছবি। কিন্তু এ যে এক মস্ত বিভ্রম বিশ্বম্ভরের মত লেখক ও মনে করেন নি, তাই “হাতের চাবুকটা শুধু সশব্দে আসিয়া জলসাঘরের দরজায় আছড়াইয়া পড়িল"-র মধ্য দিয়ে বিশাল মহীরুহ পতনের এক শোকাবহ হাহাকার ছড়িয়ে দিতে চান পাঠকের মনে, এবং তারাশঙ্ক সেই অনুভূতি জাগানোয় সফলও হয়েছেন বলা যায়। রাজা মারা গেছেন, রাজা দীর্ঘজীবী হন—“জলসাঘর” গল্পে সেই ইঙ্গিতটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর প্রাচীন সম্পর্কে আমাদের এক অদ্ভুত মোহ গল্পটিকে প্রিয় করে তোলে।
এই বইটি তারাশঙ্করের ১২টি গল্পের সংকলন, গল্পগুলি হল-
রায়বাড়ি
জলসাঘর
পদ্মবউ
ডাক-হরকরা
প্রতীক্ষা
মধু মাস্টার
তারিণী মাঝি
খাজাঞ্চিবাবু
টহলদার
ট্যারা
রাখাল বাঁড়জ্জে
নারী ও নাগিনী
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা বারোটি অসাধারণ গল্প সংগ্রহ বই - 'জলসাঘর- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়' এর পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
ডিজিটাল বইয়ের নাম- জলসাঘর
লেখক- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের ধরন- গল্প সংগ্রহ
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে-১৯৬
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ১১এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত
তারাশঙ্করের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ছিল অফুরান। সেই অফুরান ভাণ্ডার নিয়ে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন সাহিত্যে। একজন কথাসাহিত্যিকের পক্ষে এমন অভিজ্ঞতা থাকা কেবল দরকারীই নয়, অনিবার্যও বটে। এর ফলে তাঁর গল্প-উপন্যাস এত বৈচিত্র্যে ভরা। জমিদার, উচ্চবর্ণের মানুষ থেকে শুরু করে নীচুতলার কাহার, বাউরি, বান্দী, ডোম, এমনকি চোর, গুণ্ডা, খুনী প্রভৃতি অবলীলায় তার গল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। জমিদারের প্রাসাদ থেকে দরিদ্রতমের কুড়েঘর—কোন কিছুই তার দৃষ্টি এড়ায় না। তারাশঙ্করের গল্প পড়ে মনে হয় এ যেন একেবারে আকাঁড়া অভিজ্ঞতার প্রতিলিপি সব।
“বায়বাড়ি" ও "জলসাঘর” একটি দোর্দণ্ডপ্রতাপ জমিদার-বংশের গড়া ও ভাঙার গল্প, 'বায়বাড়ি' লিখলাম—লিখলাম জলসাঘর গড়ে ওঠার গল্প । জলসাঘরের ভাঙনের কথা মনে রেখেই লিখলাম “রায়বাড়ি"। [ তারাশঙ্কর কৃতিকথা, প্রথম খণ্ড, আমার সাহিত্য-জীবন ( প্রথম ভাগ), পৃ ৪১৫ ] কিন্তু গড়া ও ভাঙার মধ্যবর্তী অংশ “জলসাঘর” গ্রন্থে নেই। তাই মনে হয়, গল্প দুটি একটি বড় কাহিনীর প্রথম ও শেষ অংশ, যার মধ্যবর্তী অংশ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। তবু এই গ্রন্থেই দুটি অংশের মধ্যে একটা যোগসূত্র রাখতে চেষ্টা করেছেন লেখক-
“তিন পুরুষ ধরিয়া রায়ের করিয়াছিলেন সঞ্চয়। চতুর্থ পুরুষ করিয়া ছিলেন রাজত্ব। পঞ্চম ও ষষ্ঠ পুরুষ করিলেন ভোগ ও ঋণ। সপ্তম পুরুষ
বিশ্বম্ভরের আমলেই রায়বাড়ির লক্ষ্মী সে ঋণসমুদ্রে তলাইয়া গেলেন।” ( জলসাঘর, পৃ ২৪)।
“রায়বাড়ি” গল্পে রাবণেশ্বরের প্রতাপ ও বিক্রমের ছবি তুলে ধরা হয়েছে, “গিন্নী, মাটি বাপের নয়, মাটি দাপের।” রাবণেশ্বরের এই উক্তির মধ্যে নিহিত আছে তিনি কি ভাবে প্রজা শাসন করেন, নিজের প্রতিপত্তি অটুট রাখেন। কিন্তু সেকালের জমিদার কেবল শাসকই ছিলেন না, “জমিদার তখনও ভূস্বামী, এবং তাহাদের সে স্বামিত্বের সত্যকার অর্থ তাহারা বজায় রাখিয়াছিলেন।” (ঐ, পৃ ১}। তাই যিনি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না, তিনি বন্যার সময় প্রজাদের জন্য দ্বার খুলে দেন। এগিয়ে আসেন গাঙ্গুলির মেয়ের বিয়ের আয়োজন করতে। সেদিক থেকে রাবণেশ্বর রায় দয়ালু স্বৈরতন্ত্রীর মত একদিকে নিষ্ঠুর, নির্মম ; অন্যদিকে দয়ার সাগর। তবু লেখক রাবণেশ্বর বসুকে যতই মহিমান্বিত ভাবে আঁকতে চেষ্টা করুন না কেন তার আচরণ সেই মহিমময় রূপ কখনো কখনো বেশ চাপা পড়ে যায়। কালি বাগ্দীর সাহায্যে প্রজাদের সুপ্তি ও অসহায়তার সুয়োগ নিয়ে গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায়। রাবণেশ্বরের কাপুৰুষতা প্রকাশ না পেলেও বীরত্ব প্রকাশ পায় না, একজন নিছক ষড়যন্ত্রকারীর মত মনে হয় তাকে, যিনি প্রকাশ্যে কাজ করতে ভরসা পান না। আবার সমস্ত সম্পত্তি দেবত্রে অর্পণ করে সংসার ত্যাগের সংকল্পে তিনি অটুট থাকতে পারেন না, ফিরে আসেন। এই ফিরে আসা তার ব্যক্তিত্ব-উখিত হলে নিশ্চয় তা যথোপযুক্ত হতো সন্দেহ নেই, কিন্তু "রায় আবার জলসাঘরের দিকে চাহিলেন। দেওয়ালে বিলম্বিত তাহার পূর্বপুরুষগণের প্রতিকৃতি গুলি সজল বাতাসে মৃদুমৃদু দুলিতেছিল। এ কি, ভুবনেশ্বর রায়, ত্রিপুরেশ্বর রায় কি তাহাকে ডাকিতেছেন?” (ঐ পৃ ১৮)। এখানে রাবণেশ্বরের তেজস্বিতা ও অমিত বিক্রম ও তাকে সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে দেয় না, পূর্বপুরুষের স্মৃতি ও আহ্বান তার সমস্ত
শৌর্যবীর্য হরণ করে নেয়, যেন তিনি তাদের আহ্বানের ক্রীড়নকমাত্র । ফলে রাবণেশ্বর চরিত্র লেখকের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার আদিস্থানে অটল থাকে না। বরং খুব অল্প আয়োজনে রায়-গিন্নীর চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। প্রজাদের প্রাণরক্ষার জন্য তার দৃঢ় প্রতিবাদ, আবার “লোকের দীর্ঘশ্বাসকে তুমি ভয় কর না? আমার ওই একটি সন্তান—” উক্তির মধ্যে মায়ের ভীরু আশঙ্কার প্রকাশ তাকে রাবণেশ্বরের বিরাটত্বের পাশে অনেক বেশী মানবিক করে তোলে। রাবণেশ্বর অতি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন ফেরার সময়, আয় “জলসাঘর” এর গল্পটি এক নিঃশেষিত জমিদারের স্মৃতিভারে পড়ে থাকার কাহিনী। গৌরব লুপ্ত, তবু তার ছটা মোহ বিস্তার করে আছে। ফলে সমস্ত গল্পটি একটা দীর্ঘশ্বাসের মত মনে হয়, “বিশ্বম্ভর লক্ষ্মীহীন দেবরাজের মত শুধু বসিয়া বসিয়া দেখিলেন।” (ঐ, পৃ ২৪)। বিশ্বম্ভরের কোনও উদ্যম নেই, কারণ ঋণ-সমুদ্র থেকে ভেসে ওঠার শেষ চেষ্টাটুকুতে বাদ সেধেছে হালে বড়লোক মহিম গাঙ্গুলি।
“বসন্ত সমারোহ করিয়া রায়বাড়িতে আসে না। তাহার পাপ্য-অর্ঘ্য দিবার মত শক্তি ও বায়বংশের নাই। মালার অভাবে ফুলের বাগান শুকাইয়া গিয়াছে। আছে মাত্র কয়টা বড়গাছ মুচকুন্দ, বকুল, নাগেশ্বর, চাঁপা। সেগুলিও এই বংশেরই মত শাখা-প্রশাখাহীন, এই প্রকাণ্ড ফাটল-ধরা প্রাসাদখানার মতই জীর্ণ।” (ঐ, পৃ ১৯ }। এ বর্ণনা শুধু বায়বাড়ির বাইরের বর্ণনাই নয়, এ বিশ্বম্ভর রায়েব মানসিক অবস্থারও প্রতিচ্ছবি। বিশ্বম্ভর দর্শক চরিত্র হওয়ার ফলে সে কেবল অবস্থার দাসে পরিণত হয়েছে, উদ্যমের মধ্যে আপন পৌরুষকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি। বোধহয় তা সম্ভবও ছিল না, কেননা নবীন ব্যবসায়ীদের সঙ্গ দ্বন্দ্বে তখন জমিদারতন্ত্রের হারবার পালা শুরু হয়েছে। আর ইতিহাস ও তাই বলে। তারাশঙ্কর বিলক্ষণ জানতেন, জমিদারতন্ত্র ক্ষয়িষ্ণু সেই তন্ত্র নতুন দ্বন্দ্বে পরাস্ত হবে। তবু এই সত্যটি জানার পরও লেখক অন্তর দিয়ে তা মেনে নিতে পারেন নি, তাই গল্পের শেষদিকে মহিমের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই তিনি তুলে ধরবেন বিশ্বম্ভরের বিলাস-বিহ্বল স্মৃতি, প্রদীপ নিবে যাওয়ার আগে জ্বলে ওঠার ছবি। কিন্তু এ যে এক মস্ত বিভ্রম বিশ্বম্ভরের মত লেখক ও মনে করেন নি, তাই “হাতের চাবুকটা শুধু সশব্দে আসিয়া জলসাঘরের দরজায় আছড়াইয়া পড়িল"-র মধ্য দিয়ে বিশাল মহীরুহ পতনের এক শোকাবহ হাহাকার ছড়িয়ে দিতে চান পাঠকের মনে, এবং তারাশঙ্ক সেই অনুভূতি জাগানোয় সফলও হয়েছেন বলা যায়। রাজা মারা গেছেন, রাজা দীর্ঘজীবী হন—“জলসাঘর” গল্পে সেই ইঙ্গিতটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর প্রাচীন সম্পর্কে আমাদের এক অদ্ভুত মোহ গল্পটিকে প্রিয় করে তোলে।
এই বইটি তারাশঙ্করের ১২টি গল্পের সংকলন, গল্পগুলি হল-
রায়বাড়ি
জলসাঘর
পদ্মবউ
ডাক-হরকরা
প্রতীক্ষা
মধু মাস্টার
তারিণী মাঝি
খাজাঞ্চিবাবু
টহলদার
ট্যারা
রাখাল বাঁড়জ্জে
নারী ও নাগিনী
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা বারোটি অসাধারণ গল্প সংগ্রহ বই - 'জলসাঘর- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়' এর পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
No comments:
Post a Comment