কলকাতার বাবু ও তাদের মৃত্যুবৃত্তান্ত - সিদ্ধার্থ বসু, বাংলা বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'কলকাতার বাবু ও তাদের মৃত্যুবৃত্তান্ত'
লেখক- সিদ্ধার্থ বসু
বইয়ের ধরন- ঐতিহাসিক ঘটনাসমুহ
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ১২৮
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ২৫এমবি
স্ক্যান- অভিষেক ব্যানার্জি
প্রিন্ট ভালো কিন্তু মোবাইল স্ক্যান, জলছাপ মুক্ত
বইটি সম্পর্কে লেখকের কথা-
কলকাতার বাবুদের মৃত্যুবৃত্তান্ত লিখতে গিয়ে বাংলার বাবুদের কথাও এসে গেছে। এই আসাটি নেহাৎই প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়। এই বৃত্তান্তে এই অংশটি বাদ দেওয়া অনুচিত হবে মনে করেই ঢোকান হয়েছে। এই মৃত্যুবৃত্তান্ত পড়তে পড়তে অনেকের মনে হতেই পারে যে এ তো মৃত্যু নয় যেন বাবুদের মৃত্যুবিলাস। সেকালের ধনীদের এই জীবনচর্চার সঙ্গে মানান সই তাদের মৃত্যু নিয়ে নানান ভাবনা।
তাদের জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যের মতই তাদের মৃত্যুও বৈচিত্র্যে ভরা। নানান ভাবে সেই মৃত্যুকে তারা বরণ করে তাদের শেষ দিনগুলোকেও একটি স্মরণীয় ইতিহাস করে তুলেছেন। বিলাসব্যসন, জাঁকজমক পূর্ণ এই জীবনযাত্রার মতই জাঁকজমক ও বর্ণময় হয়ে উঠেছিল তাদের মৃত্যু, শুধু মৃত্যু নয় তাকে ঘিরে যে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম সেখানেও তাদের জাঁকজমকের ঐতিহ্য অব্যাহত ছিল। পাশাপাশি ছিল সেই সময়ের এই পারলৌকিক ক্রিয়ায় আগত অগণিত নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষের মিছিল। একদিকে বাবুদের মৃত্যুর পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের জাঁকজমক আর অন্যদিকে সামান্য দানের আশায় ছুটে আসা নিরন্ন মানুষের এই চিত্র সেদিনের কলকাতার তথা বাঙলার প্রকৃত চিত্র, এ কথা অস্বীকার করার বোধহয় কোন উপায় নেই।
গঙ্গাজলি প্রথার মত অমানবিক ও নারকীয় প্রথার যে চিত্র পাওয়া যায় তা এক কথায় অসহনীয়। লেখক হিসেবে এই গ্রন্থের মাধ্যমে সেকালে বাবুদের মৃত্যুর এই চিত্রই পাশাপাশি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি মাত্র। আশাকরি সচেতন পাঠক তা বুঝবেন।
লেখক ও বইটি সম্পর্কে দু-চারটি কথা-
লেখক শ্রী সিদ্ধার্থ বসু একজন সমাজ সচেতন ও সংবেদনশীল লেখক। পুরানো কলকাতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, এবং নির্বিত্ত মানুষদের জীবন চর্চা নিয়ে এখনও যারা নিরলস কাজ করে চলেছেন সিদ্ধার্থ তাদের মধ্যে একজন। কোম্পানি শাসন বিস্তারের অনুবর্তিতায় বাংলায় অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বাবুসমাজের বিস্তার। মূলত চক্রান্তের শরিক হয়ে অথবা মুৎসুদ্দি ও বেনিয়া বৃত্তির দ্বারা এরা ধনাঢ্য হয়ে উঠেছিল। এই বিকাশ মার্কসের কথায়, '১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিসের বড়লাটগিরির আমলে' চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত লাগু হওয়ার কারণে আরও পূর্ণতা লাভ করে। নতুন ভূমি বন্দোবস্তের সুযোগে কলকাতার আশেপাশের সমস্ত ভাল জমিদারিগুলি কলকাতার 'নবজাগরিত’ বাবুদের হাতে চলে যায়। দোল-দুর্গোৎসব, নেশা, বাই-বাইজীদের নিয়ে বাবুদের বড়ই সুখের সে সময়। উপার্জিত ধনরাশি ব্যয় করার জন্য নিত্য নুতন উপায় উদ্ভাবন করতেন কলকাতার বাবুরা। কখনও বাঁদরের বা পায়রার বিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতেন। কখনও বুলবুলির লড়াই বা হাফ-আখড়াইয়ের জন্যও টাকা উড়িয়ে, যে বাবু যত উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিতে পারতেন তার কদর তত বেশি ছিল। আয়ের থেকে ব্যয়ের বোঝা বহুগুণ বেশি হওয়ায় অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন।
পরজীবী এই বাবুসমাজের মৃত্যু ঐতিহাসিক কারণেই অনিবার্য ছিল। যে কোনো জীবিত সত্তার মতো বাবুদের মৃত্যু অনিবার্য। বরং শিবনাথ শাস্ত্রীর কথা মতো, এই বাবুরা নিয়মিত দিনে ঘুমিয়ে বারনারী সহযোগ আকণ্ঠ মদ্যপান করে রাত্রি জাগরণের ফলে, অনেকেই স্বল্পায়ু হতেন। জীবনের অনিবার্য পরিণতি মৃত্যু। কিন্তু এখানে লেখক তাঁর দৃষ্টি প্রসারিত করেছেন। কলকাতার বাবু সমাজের ‘মৃত্যু’ শব্দচয়নটি লেখকের সুচিন্তিত প্রয়াস। নিজেদের জাহির করার একটা উপায় মাত্র। এরকম একটি অপরিসর অংশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা বড় সহজ কথা নয়; লেখকের অনন্যতাও এখানে। বিষয়টি কঠিন একারণেই, বাবুরা বিচরণ করতেন ভাববাদী রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু দর্শনের বিপরীত মার্গে, স্থুল বস্তুবাদের পথে। 'মরণ রে, / তুঁহুঁ মম শ্যাম-সমান’ অথবা ‘আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়’ এমন কথা বলার মতো আত্মশক্তি পরজীবী শ্রেণি পাবে কোথা থেকে? বাবুদের মৃত্যু নিয়ে মোচ্ছবের প্রধান কারণ ছিল বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করে স্ব-সমাজে প্রতিপত্তি বাড়ানো।
শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের আদ্য-শ্রাদ্ধে অর্থব্যয়ে মোচ্ছব নয়, অনেকেই নিজের জীবদ্দশায় পুত্র-পরিজনদের, দেহ সৎকার, পারলৌকিক ক্রিয়া, ব্রাহ্মণদের দান-ভোজন, কাঙালি ভোজনের নির্দেশগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়ে যেতেন। প্রতিযোগিতা চালানো হতো, খোল-কত্তাল নিয়ে কতজন কীর্তনিয়ার মিছিল হবে, কত মন ঘি পুড়ল, পুরোটাই চন্দন কাঠ না তার মধ্যে ভেজাল আছে। শ্মশানে মদ-গুলি-চরসের ধোঁয়া উড়িয়ে কব্জি ডুবিয়ে লুচি, মিস্টি ভোজনের প্রতিযোগিতা চলত। কতজন ব্রাহ্মণকে শ্রাদ্ধে সামিল করা যায় তারও প্রতিযোগিতা চলত। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সেদিনের কুৎসিত ক্রিয়া-কর্ম ও কুসংস্কারের অপভ্রংশগুলি এখনও আমাদের সমাজের মধ্যে টিকে রয়েছে।
তৎকালীন পত্র-পত্রিকা ও সাহিত্য থেকে সংগৃহীত তথ্য ক্রমপর্যায়ভুক্ত করে লেখক তাঁর লেখনিতে সন্নিবিষ্ট করে প্রমাণ করেছে, বাবুদের মধ্যে শুধুমাত্র মৃত্যুবিলাস ক্রিয়াশীল ছিল না। প্রতিযোগিতার রূপ ধারণ করেছিল। কলকাতার বাবুসমাজের সূত্রপাত হয়েছিল রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাত ধরে, তার মাতৃশ্রাদ্ধের বিবরণ এখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বাবু কালচারকে সর্বোচ্চ সীমায় পৌছে দেন বাবু দ্বারকানাথ ঠাকুর। তাঁর মাতার অন্তর্জলি যাত্রা হয়েছিল, যার উল্লেখ, এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। দ্বারকানাথের মা অলকাসুন্দরী মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিধবা হন। পিতা রামলোচনের উইলে অলকাসুন্দরীর কর্তৃত্বের কথা লেখা ছিল। সেই জোরে পরিবারের কর্তৃত্ব তিনি বহাল রেখেছিলেন। তিনি অত্যন্ত ধর্মনিষ্ঠ ও বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে অন্তর্জলি যাত্রায় গঙ্গাপাড়ে রাখার সিদ্ধান্ত হলে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন।
বাবু কূলচূড়ামণিদের মধ্যে অনেকেই বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। বৈষ্ণব কুলচুড়ামণিদের মধ্যে অন্যতম একজন, বাবু রামদুলাল সরকার। ইনি সাতুবাবু-লাটবাবুদের পিতা। এখানে লক্ষণীয় যে, এরা কেউই পারলৌকিক ক্রিয়ার সময় বৈষ্ণবদের সহজিয়া নিয়ম পদ্ধতি অনুসরন করে সমাধি দিতেন না। বরং হিন্দু ব্রাহ্মণ প্রথা অনুসারে দানসাগর শ্রাদ্ধ করা হতো। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিতরা অনেকেই কাঙালি ভোজন করাতেন। বৈষ্ণব ধর্মের সহজিয়া নিয়ম পদ্ধতি গ্রহণে ভেকধারীদের বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়। ব্রাহ্মণ্য অনুশাসনকে উপেক্ষা করে স্থুলচারের জন্য বৈষ্ণবদের নামাবলী গায়ে দেওয়া, এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। মনুষ্যত্বের অতীত অবমাননাকে সমাজ কখনো আঁকড়ে ধরে রাখে না, তাকে প্রত্যাখান করে মানব মুক্তির ভাবনাকে গড়ে তোলে। সে কারণেই আমাদের কলঙ্কিত অতীত জানাও অত্যন্ত জরুরি। বইটির বহুল প্রচার প্রত্যাশা করি।
এই লেখকের অন্যান্য বইগুলি হল-
শ্যাওলা ও অন্যান্য গল্প, চালচিত্র, সাক্ষীবট, আত্মপরিচয়, ভীষণ যুদ্ধের পর, ক্রীতদাস ও কলকাতাবাবুদের দাসবিলাস, সেকালে নারীদের মৃত্যু ও মৃত্যু ভাবনা, অন্য মহাশ্বেতা, শেষ কিস্তি, প্রভৃতি।
উপরোক্ত বাংলা বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
*লেখকের অনুরোধে আমরা পিডিএফটি সরিয়ে দিয়েছি।
প্রিয় পঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে একটি ঐতিহাসিক ঘটনাসমুহ বই- 'কলকাতার বাবু ও তাদের মৃত্যুবৃত্তান্ত - সিদ্ধার্থ বসু'-এর পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
No comments:
Post a Comment